বিশ্ব – বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসে নজর দেওয়া যাক আফ্রিকার নাইজারের দিকে—একটি দেশ, যা কার্যত জনসংখ্যা বিস্ফোরণের মুখে দাঁড়িয়ে। বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৭৯ লাখ হলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৭ কোটিতে। যা দেশটির অর্থনীতি, খাদ্যনিরাপত্তা ও সামাজিক কাঠামোর উপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করবে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নাইজারে একজন মহিলার গড় সন্তানসংখ্যা ৬.৮—বিশ্বে সর্বোচ্চ। শুধু তা-ই নয়, জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই ১৫ বছরের নিচে, যার অর্থ ভবিষ্যতে জনবিস্ফোরণের সম্ভাবনা আরও তীব্র হবে।
এখানকার অধিকাংশ মানুষ কৃষিনির্ভর গ্রামীণ অঞ্চলে বসবাস করেন, যেখানে শিশুরা শ্রমশক্তি হিসেবেই বিবেচিত হয়। বড় পরিবারকে জীবিকার নিরাপত্তা হিসেবে দেখা হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাল্যবিবাহ, শিক্ষার অভাব এবং অত্যন্ত কম হারে গর্ভনিরোধক ব্যবহার—সব মিলিয়ে একটি দুষ্টচক্র তৈরি হয়েছে।
শুধু তাই নয়, শিশুমৃত্যুর হারও উদ্বেগজনক। প্রতি ১০০০ শিশুর মধ্যে প্রায় ২৭৪ জন ৪ বছর হওয়ার আগেই মারা যায়। এই পরিস্থিতিতে পরিবারগুলি আরও বেশি সন্তান জন্ম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যাতে অন্তত কয়েকজন জীবিত থাকে।
একদিকে খাদ্যাভাব, অন্যদিকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার সীমাবদ্ধতা—সব মিলিয়ে নাইজার এক জনসংখ্যাগত সংকটে আটকে আছে। গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে দেশটির অবস্থান ১১৫তম। শিশুদের স্কুলে যাওয়ার হার মাত্র ৩৪ শতাংশ; মেয়েদের ক্ষেত্রে তা আরও কম, মাত্র ২৭ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের গবেষণা বলছে, যদি মেয়েদের শিক্ষায় অগ্রাধিকার দেওয়া যায় এবং গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার বাড়ানো যায়, তাহলে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রজনন হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে—২.৭-এ পৌঁছাতে পারে। তবে বাস্তবে সে পথ এখনও কণ্টকাকীর্ণ।
