জলপাইগুড়ি – পুজোর ঢাকে কাঠি পড়তে আর বেশি দেরি নেই, আর তার আগেই জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন এনেছে একটি অভিনব পর্যটন উদ্যোগ, যার নাম ‘সম্প্রীতির ভ্রমণ’। এই প্যাকেজের মাধ্যমে জেলার সব প্রধান ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থান একসঙ্গে দেখতে পারবে পর্যটকরা, যাত্রাটি হবে সরকারি বাসে। জেলার গুরুত্বপূর্ণ মন্দির, মসজিদ, গির্জা ও মাজার ঘুরে দেখানোর পাশাপাশি উপস্থিত থাকবেন অভিজ্ঞ গাইড, যিনি প্রতিটি স্থানের ইতিহাস, ধর্মীয় গুরুত্ব ও স্থানীয় কাহিনি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরবেন।
এই ভ্রমণ প্যাকেজের খরচ নির্ধারিত হয়েছে মাত্র ৯০০ টাকা, যার মধ্যে বাসযাত্রার পাশাপাশি সকাল ও দুপুরের খাবারের ব্যবস্থাও থাকবে। সকাল ৯টায় নির্দিষ্ট রুট ধরে যাত্রা শুরু হবে এবং দিনের শেষে বাস ফেরত নিয়ে আসবে সূচনাস্থলে। এতে করে স্বল্প খরচে একদিনে জেলার বিভিন্ন ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে দেখার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা পর্যটকদের জন্য অনেকটা সুবিধাজনক ও আকর্ষণীয়।
আজ, বুধবার, জেলা প্রশাসক শামা পারভীন ‘সম্প্রীতির ভ্রমণ’ প্যাকেজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এবং এনবিএসটিসির প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসক তাঁর বক্তব্যে জানান, এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র পর্যটনের প্রসার নয়, বরং সামাজিক সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছে দেওয়াও। তিনি বলেন, “হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান—সব ধর্মের ঐতিহ্যবাহী স্থান একসঙ্গে ঘুরে দেখলে মানুষের মধ্যে ঐক্যের অনুভূতি আরও দৃঢ় হবে।”
জলপাইগুড়ি দীর্ঘদিন ধরেই পর্যটকদের প্রিয় গন্তব্য। পাহাড়, নদী, চা-বাগান ও বনজঙ্গলে ঘেরা এই জেলা শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্যের জন্যই নয়, বরং এর সমৃদ্ধ ইতিহাস ও বহুধর্মীয় সংস্কৃতির জন্যও প্রসিদ্ধ। দেবী চৌধুরানির মন্দির, ভামরী দেবীর মন্দির, জল্পেশ মন্দির, সেন্ট মাইকেল চার্চ, কালু সাহেবের মাজার—এসব স্থানের প্রতিটিরই আলাদা ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে। এতদিন এইসব স্থান সমন্বিতভাবে ঘুরে দেখার কোনো ব্যবস্থা ছিল না, যা ‘সম্প্রীতির ভ্রমণ’ প্যাকেজের মাধ্যমে সম্ভব হচ্ছে।
এই ভ্রমণে যোগ দিতে জেলা প্রশাসন একটি বিশেষ ওয়েবসাইট চালু করেছে, যেখানে বাড়ি বসে অনলাইনে বাসের সিট বুক করা যাবে। এতে পর্যটকদের জন্য পরিকল্পনা করা সহজ হবে এবং সময়ের সাশ্রয় হবে। স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা মনে করছেন, এই উদ্যোগ শুধু পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নেবে না, বরং জেলার বহুধর্মীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে মানুষকে আরও ঘনিষ্ঠ করবে। একসঙ্গে মন্দির, মসজিদ, গির্জা, মাজার দেখা গেলে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধও বৃদ্ধি পাবে।
প্রশাসন জানিয়েছে, পর্যটকদের ইতিবাচক সাড়া পেলে এই প্যাকেজ সারা বছর চালু রাখা হবে। ভবিষ্যতে এই রুটে আরও ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্থান যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে জলপাইগুড়ির পর্যটন মানচিত্র আরও সমৃদ্ধ হয়। উদ্বোধনের দিনেই অনেক পর্যটক এই প্যাকেজে অংশ নিয়েছেন এবং তারা সবাই এই নতুন উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। এক পর্যটক বলেন, “জলপাইগুড়িতে বহুবার এসেছি, কিন্তু সব ধর্মীয় স্থান একসঙ্গে দেখার সুযোগ আগে কখনও পাইনি। এই ট্যুর সেই সুযোগ করে দিল, আর সেটা খুবই সাশ্রয়ী খরচে।”
জলপাইগুড়ি থেকে শুরু হওয়া এই ‘সম্প্রীতির ভ্রমণ’ আশা করা যাচ্ছে রাজ্যের অন্যান্য জেলাতেও ছড়িয়ে পড়বে, যা পর্যটন ক্ষেত্রের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক সম্প্রীতির ক্ষেত্রেও এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
