রাজ্য – আগামী সপ্তাহেই বঙ্গ সফরে আসছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। বিজেপি সূত্রে খবর, তিনি ১৮ সেপ্টেম্বর কলকাতায় পৌঁছবেন। তাঁর সফরের মূল উদ্দেশ্য হল কেন্দ্রীয় সরকারের জিএসটি সংক্রান্ত নতুন সিদ্ধান্ত ও তার সুফল সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ অনুযায়ী, প্রতিটি রাজ্যে সাংবাদিক বৈঠকের মাধ্যমে কর সংস্কার বিষয়ে জনগণকে অবহিত করা হবে। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পশ্চিমবঙ্গ তাঁর সফরের প্রথম তালিকায় রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্প্রতি এনডিএ-র বৈঠকে সকল সাংসদদের নির্দেশ দিয়েছেন, কর সংস্কার নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। বিশেষ করে, নতুন জিএসটি হার কীভাবে জনগণের উপর থেকে আর্থিক চাপ কমিয়েছে, তা তুলে ধরা হবে। নির্মলা সীতারমনের এই সফর মূলত সেই প্রচার কৌশলেরই অংশ।
গত ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকের পর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন জিএসটি হার কার্যকর হবে। এবার থেকে ১২ শতাংশ ও ২৮ শতাংশ হারের জিএসটি স্ল্যাব বাতিল করা হচ্ছে। নতুন কাঠামোয় ৫ শতাংশ, ১৮ শতাংশ এবং ৪০ শতাংশ হারে কর ধার্য থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকার এই পরিবর্তনকে বলছে ‘নেক্সট জেন জিএসটি রিফর্ম’।
নতুন জিএসটি সংস্কারের আওতায় স্বাস্থ্যবিমা ও জীবন বিমা থেকে সম্পূর্ণ কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। পাশাপাশি যেসব পণ্যে আগে ৫ শতাংশ জিএসটি ধার্য ছিল, তার মধ্যে বহু গুরুত্বপূর্ণ পণ্যকে করমুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৩৩টি জীবনরক্ষাকারী ওষুধ, পাউরুটি, রুটি-পরোটা এবং পনিরের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য।
এই সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কংগ্রেস দাবি করেছে, জিএসটির মূল কাঠামো তৈরিতে তাঁদের দলের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন এই দাবিকে কটাক্ষ করে বলেছেন, “যারা একসময় জিএসটি-কে ‘গব্বর সিং ট্যাক্স’ বলে বিদ্রূপ করেছিলেন, আজ তারাই সংস্কারের কৃতিত্ব দাবি করছেন।” তিনি আরও জানান, জিএসটির প্রথম পর্যায় ছিল “ঐক্যের জন্য”, দ্বিতীয় পর্যায় “সরলতার জন্য”, আর এখন তৃতীয় পর্যায় মূলত সাধারণ মানুষের কাছে বিষয়টি আরও সহজভাবে তুলে ধরার উপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
রাজনৈতিক মহলের মতে, বিজেপি নেতৃত্বের নজরে এখন ২০২৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন। দুর্গাপুজো ও কালীপুজোর মতো উৎসব শেষে রাজ্যে বড় রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু করার পরিকল্পনা করছে দল। সেই কৌশলের অংশ হিসেবেই উৎসবের আগে থেকেই কেন্দ্রীয় নেতাদের আনাগোনা বাড়ানো হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের পর রাজ্যে আসবেন কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সরকারি কর্মসূচির জন্যই তিনি কলকাতা সফর করবেন। এছাড়া, চলতি মাসের মধ্যেই বাংলায় আসার পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহেরও। তিনি কলকাতা ও আশেপাশের অন্তত দুটি দুর্গাপুজো উদ্বোধনে যোগ দিতে পারেন। পাশাপাশি, মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডারও শিগগিরই বাংলায় সফরের সম্ভাবনা রয়েছে।
