জেলা প্রশাসনের প্রচেষ্টায় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর পোশাক তৈরির কারখানায় সচ্ছল মহিলারা। গ্রামের টুলটুলি, চন্দনা ও রীনারা আগে রোজগার কি জিনিস তা জানতেন না। গরীব পরিবারে একমাত্র আয়ের উৎস ছিল তাদের স্বামী। সামান্য টাকার জন্যও স্বামীর মুখ চেয়ে থাকা ছাড়া আর অন্য কোন উপায় ছিল না। কিন্তু দিন পাল্টেছে। আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রীতিমতো ছোট খাট একটি স্কুলের পোশাক তৈরির কারখানা হয়েছে আলিপুরদুয়ার এক নম্বর ব্লকের পররপার কৃষক বাজারের বিল্ডিংয়ের দ্বীতলে।
কাপড় কাটা থেকে সেলাই, বোতাম লাগানো সবই হচ্ছে এখানে। কাজ করছেন আলিপুরদুয়ার এক নম্বর ব্লকের পররপার, তপসিখাতা ও বঞ্চুকামারি এই তিন গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় শতাধিক মহিলা। প্রত্যেকেই মাসে পাচ থেকে দশ হাজার টাকা রোজগার করছেন। কিন্তু কিভাবে সম্ভব হল এই উদ্যোগ। পররপার দিশারি মহিলা মহাসঙ্ঘ এই কাপড় সেলাইয়ের কারখানা পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। এই সঙ্ঘের সভানেত্রী উষারানি বর্মন বলেন, ‘রাজ্য সরকার পাশে না থাকলে এত বড় উদ্যোগ সফল হত না।
আমরা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা ব্যাংক থেকে ঋন নিয়ে প্রায় দশ লক্ষ টাকার বেশি খরচ করে এই কারখানা দিয়েছে। মেশিন কেনা থেকে ঋন দেওয়ার ব্যবস্থা সবটাই করেছে জেলা প্রশাসন। শুধু তাই নয় আমাদের সেলাইয়ের প্রশিক্ষন দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এখন আমাদের সরকারি স্কুলের ড্রেস তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছে। আমরা কাজ করে কুলোতে পারছি না। তবে স্কুল ড্রেস তৈরি শেষ হলে আমরা বাইরের অর্ডার নিতে চাই। জেলায় যারা জামাকাপড় তৈরি করে ব্যবসা করতে চান আমাদের অর্ডার দিন। আমরা ভালো মানের জামা, প্যান্ট, নাইটি, ব্লাউজ সব তৈরি করে দেব বলে বার্তা তার।’
জানা গিয়েছে এই সঙ্ঘ বর্তমানে আলিপুরদুয়ার ১ নম্বর ব্লকের তপসিখাতা, পররপার ও বঞ্চুকামারি এই তিন গ্রাম পঞ্চায়েতের সব সরকারি স্কুলের পোশাক তৈরি করছেন। অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত সব সরকারি স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের দুই সেট করে পোশাক বিনামুল্যে দেয় রাজ্য সরকার। এই বিপুল পরিমান পোশাক গোটা জেলাতেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের তৈরি করা কারখানাতে তৈরি হচ্ছে। এই পোশাক তৈরি করছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা।
আরও পড়ুন – চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগ অঞ্চল সভাপতির বিরুদ্ধে
আলিপুরদুয়ার জেলা গ্রামীন উন্নয়ন শাখার প্রকল্প অধিকর্তা ইন্দ্রজিত তালুকদার বলেন, ‘জেলার অন্তত ১৪০০ জন মহিলাকে আমরা আধুনিক বিদ্যুৎ চালিত মেশিনে পোশাক তৈরির প্রশিক্ষন দিয়েছি। জেলার ২৭টি ইউনিট তৈরি হয়েছে। সেই সব ইউনিটে পোশাক সেলাইয়ের জন্য কাপড় কাটার মেশিন, সেলাই মেশিন ও বোতাম লাগানোর অত্যাধুনিক মেশিন বসানো হয়েছে। এই ইউনিটগুলোতেই জেলার সব সরকারি স্কুলের ছেলে মেয়েদের পোশাক তৈরি হচ্ছে।
কাপড় রাজ্য সরকার দিয়েছে। শুধু সেলাইয়ের টাকা দেওয়া হচ্ছে মহিলাদের বলে জানান তিনি।’ পররপার এই ইউনিটেই কাজ করতে আসেন বাইরিগুড়ি গ্রামের চন্দনা বর্মন। এদিন তিনি বলেন, ‘আমি সাধারন মেশিনে বাড়িতে সেলাইয়ের কাজ করতাম। তেমন রোজগার করতে পারতাম না। কিন্তু বিদ্যুৎ চালিত এই মেশিনে আমি প্রতিদিন ১৬টি ফুলপ্যান্ট ২৫টি হাফ প্যান্ট তৈরি করতে পারি। মাসে অন্তত দশ হাজার টাকা রোজগার করি। সংসারে এখন আমি ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাতে পারি। এই ইউনিট হওয়ায় আমাদের খুব সুবিধে হয়েছে।’