নিরাপত্তা জোরদার হলো কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনে। বাংলাদেশে মন্দির, মণ্ডপে ভাঙচুর, ইসকন মন্দিরে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে গত কয়েকদিন ধরেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যেমন রাজনৈতিক দলগুলির তরফে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ চলছে, তেমনি কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের সামনেও বিক্ষোভ দেখাচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকরা।
ওই ঘটনার প্রতিবাদ, নিন্দা জানিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য মেইল ও চিঠি আসছে উপহাইকমিশনের সরকারি মেইলে। এমনকি রবিবার ইসকন কলকাতা শাখার তরফেও হাতে প্ল্যাকার্ড, মোমবাতি নিয়ে মানববন্ধনে সামিল হয়। এরই মধ্যে সোমবার বিজেপি বিধায়ক ও পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল দেখা করেন উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসানের সাথে।
সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর অত্যাচার অবিলম্বে বন্ধ করা এবং সে দেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা, সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ দাবি করেছে ওই প্রতিনিধি দল। সেইসাথে অবিলম্বে বাংলাদেশের মাটিতে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার বন্ধ না হলে সীমান্তে অবরোধেরও হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখেন শুভেন্দু। স্বভাবতই নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে উপহাইকমিশন কর্মকর্তারা। আর সেই প্রেক্ষিতেই পশ্চিমববঙ্গ রাজ্য সরকারের কাছে অতিরিক্ত নিরাপত্তা চেয়েছে উপহাইকমিশন কর্তৃপক্ষ।
আর ও পড়ুন বাংলাদেশের হিংসা নিয়ে মুখ খুললেন অপর্ণা সেন, কী বললেন?
আর তার পরই কলকাতার ৯, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সরণীতে অবস্থিত বাংলাদেশ ডেপুটি উপ-হাইকমিশনের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গেছে।সোমবার সন্ধ্যায় উপহাইকমিশনার তৌফিক হাসান জানান ‘আসলে যেহেতু অনেকেই এখানে স্মারকলিপি দিতে আসছেন বা প্রতিবাদ, বিক্ষোভে সামিল হচ্ছে, ইসকনের তরফেও বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে-সব মিলিয়ে একটু নিরাপত্তা অভাব বোধ করছি। আর সেই কারণেই অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে আবেদন জানাই এবং রাজ্য সরকার সেটা আমাদের দিয়েছে।’
হাসান বলেন ‘বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও জানিয়েছেন যেই দোষ করুক না কেন তাকে খুঁজে বের করা হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে যাতে এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে আর না ঘটে।’
উপ-হাইকমিশনার আরও জানান ‘বাংলাদেশে অবিলম্বে এই জিনিস বন্ধ না হলে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার পেট্রাপোল সীমান্তে বড় ধরনের ধর্মঘটে সামিল হবে বলে শুভেন্দু অধিকারী এদিন জানিয়েছেন। মঙ্গলবার তিনি একটি স্মারকলিপি জমা দিতে আসবেন। সেটা পাওয়ার পরই আমরা তাদের কর্মসূচি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারবো এবং যথাস্থানে আমরা সেই লিখিত চিঠি পাঠিয়ে দেবো।’
এদিকে উপ-হাইকমিশনের সাথে সাক্ষাতের পর সংবাদমাধ্যমের সামনে শুভেন্দু অধিকারী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন ‘বাংলাদেশে এই জিনিস বন্ধ না হলে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ভারতের যতগুলো সীমান্ত আছে সেখানে গিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হবে।’
এই ইস্যুতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে শুভেন্দু বলেন ‘মমতা ব্যানার্জি সংখ্যালঘুদের ভোটে জিতেছেন, তাই হিন্দুদের প্রতি তার কোন দায়বদ্ধতা নেই। গত পাঁচদিন ধরে বাংলাদেশে হিংসার ঘটনা চলে ঘটে চলেছে, অথচ মুখ্যমন্ত্রী নীরব কারণ তার ভোটব্যাঙ্ক চলে যাবে। তাছাড়া ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর তিনি নিজেই স্বীকার করেছিলেন, যে গরু দুধ দেয় তারা লাথি খাওয়াও ভালো। তাই এই দুধেল গাই চটে যাবে, তার ভোটব্যাঙ্ক নড়ে যাবে, তাই তিনি নিশ্চুপ।’
বিজেপি বিধায়ক আরো জানান ‘পশ্চিমবঙ্গের মানুষ দেখছে দেবী দুর্গার গায়ে যারা হাত দিয়েছে, মন্ডপ যারা ভেঙেছে… দেবী দুর্গা যেমন অসুরকে ধ্বংস করেছিলেন, তেমনি এরাও ধ্বংস হবে।