জোর, জুলুম নয়, ভরসা বিশ্বাস দিয়ে শিল্প গড়ে তোলা যায় দেখালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জোর নয়, জুলুম নয়, লাঠি নয়, গুলি নয়, কেবলমাত্র ভরসা বিশ্বাস এবং ভালোবাসা দিয়ে মানুষের মন জয় করে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা শিল্প গড়ে তোলা যায় তা দেখালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা কালে বিধানসভায় দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেছিলেন বীরভূমের মাটিতে বৃহত্তম ডেউচা পাচামিতে কোল ব্লক তৈরি হবে। তৃতীয়বার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেই শিল্পের অগ্রগতি নিয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মধ্যে অন্যতম হলো ডেউচা পাচামি কয়লা শিল্প।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মোতাবেক শনিবার সিউড়িতে জমিদাতাদের পরিবারের হাতে গ্রুপ-ডি পদে নিয়োগ পএ হাতে তুলে দিলেন রাজ্যের পুর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এদিন ২৩৮ জনের হাতে এই নিয়োগ পত্র প্রদান করা হয়। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতো যারা আঠারো বছর পূর্ণ করেনি তাদের আগামী একবছর দশ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হবে, সেই তালিকা অনুযায়ী প্রত্যেকের হাতে ভাতার চেক তুলে দেওয়া হয়।
এদিন বীরভূমের সিউড়িতে মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যের পুর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বিরোধীদের দিকে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করে বলেন, কখনও নিজেদের মধ্যে বিভাজন, কখনও ভুল বোঝানো, কখনও অপপ্রচার, কখনও আবার পাশের রাজ্য থেকে মাওবাদী এনে সন্ত্রাস তৈরির চেষ্টা হয়েছে। ফিরহাদের কথায়, ‘বাংলাকে ঘিরে ফেলার ষড়যন্ত্র চলেছে’। এ জন্য বিরোধীদের দিকেই আঙুল তুলেছেন তিনি। বিশেষত যে ভাবে বিভিন্ন সময়ে দেউচা পাঁচামি নিয়ে চক্রান্ত ও অপপ্রচার করা হয়েছে, তার নেপথ্যে সেখানকার মানুষকে পিছিয়ে দেওয়ারই পরিকল্পনা রয়েছে বলে মনে করেন ফিরহাদ হাকিম।
সমস্ত কিছুকে বাংলাকে টেনে নামানোর কৌশল, বলেছেন তিনি। যদিও স্থানীয় মানুষ সমস্ত চক্রান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁদের শুভেচ্ছা জানাতেই এসেছেন ফিরহাদ, জানিয়েছেন সে কথাও। বক্তব্যের মাঝে এসেছে বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতির কথাও। পুর মন্ত্রীর কথায়,আমাদের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা নিশ্চিত ভাবেই আপনাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। ফিরহাদ হাকিম বলেন, মানুষের পেটে ভাত দেওয়া শুভ কাজ। এর চেয়ে ভাল আর কিছু হয় না।
গত সপ্তাহে মমতাদি বললেন, তোমায় যেতে হবে, আমি বললাম নিশ্চয়ই যাব। এরপরেই ফিরহাদ হাকিম বলেন, আরও আনন্দ পেতাম যদি এই স্টেজে অনুব্রত মণ্ডল থাকতেন। পাশাপাশি মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলনের জন্য টাটা কোম্পানি সিঙ্গুর ছেড়ে চলে যায় নি,তৎকালীন সিপিএমের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের একগুয়েমির জন্য টাটা কোম্পানি ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছিল। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন ছশো একর জমির ওপর গাড়ি তৈরির কারখানা হোক, বাকী চারশো একর জমি গ্রামবাসীদের ফিরিয়ে দেওয়া হোক। এটা মেনে নিলেই কারখানা বাস্তবায়িত হত।
কিন্তু বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অকারণ জেদের কারণে সিঙ্গুরে টাটা গোষ্ঠী গাড়ি তৈরি কারখানা করতে পারেনি। তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে যেখানে যেখানে শিল্প গড়ে উঠেছে কোথাও নন্দীগ্রাম সিঙ্গুর এর মত গুলি লাঠি চালাতে হয় নি। কারন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে কেউ নয়, তাই আমরা মানুষকে নিয়ে চলি, মানুষের সাথে পা মিলিয়ে চলি। মানুষের সিদ্ধান্তকে সম্মান করে তবেই আমরা শিল্প গড়ে তুলি।
ডেউচা পাচামি কয়লা শিল্প গড়ে তোলার আগে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, একটুকরো জমি ও সরকার জোর করে অধিগ্রহণ করবে না, কয়লা শিল্প হলে বীরভূমের পাশাপাশি রাজ্যের কতটা মানোন্নয়ন ঘটবে এটাই আমরা ডেউচা পাচামি এলাকার সকল মানুষকে বোঝাবো, মানুষ যখন তার সুফল বুঝতে পেরে স্বইচ্ছায় ভালোবেসে রাজ্য সরকারের কাছে কয়লা শিল্পের জন্য জমি তুলে দেবেন, তখনই আমরা কয়লা শিল্প গড়ে তোলার জন্য এগিয়ে যাবো।
আরও পড়ুন – থিম ও সাবেকিয়ানার মেল বন্ধনে নজর কাড়বে ডুয়ার্সের নেতাজী সংঘ
জমি দাতাদের মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আগে জমির জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরন ও চাকরি দেওয়া হবে তারপরেই কয়লা শিল্পের জন্য সরকার খনন কার্য শুরু করবে। মুখ্যমন্ত্রী তার প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন এমনটাই দাবি করেছেন গ্রুপ-ডি পদে নিয়োগ পত্র হাতে পাওয়ার পরে বাদল হাঁসদা, চাষি সোরেন। তারা বলে, এরকম মানবিক মুখ্যমন্ত্রী আমরা আগে কখনো দেখিনি। আগে চাকরি দিয়ে পড়ে শিল্পের কাজ শুরু করছে মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তে আমরা অত্যন্ত খুশি।