বিদেশ – চারিদিকে শুধু জল আর জল। কোথাও কাদা, কোথাও ধ্বংসস্তূপ, কোথাও আবার গাছে উঠে বাঁচার চেষ্টা পশুপাখির। এমনই এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস স্টেটে, যেখানে ৪ জুলাই ২০২৫ থেকে শুরু হওয়া এক বিধ্বংসী বন্যা রাজ্যজুড়ে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছে। এই বন্যায় এখনও পর্যন্ত ১২০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং প্রায় ২০০ জন নিখোঁজ বলে জানা গেছে। মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু ও মহিলা। টেক্সাসের এই বন্যাকে আমেরিকার ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ অভ্যন্তরীণ বন্যা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে সামার ক্যাম্প ‘মিস্টিক’-এ। সেখানে হঠাৎ করে প্রবল জলের তোড়ে ৫০০-র বেশি শিশু ভেসে যায়। যদিও অধিকাংশকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, এখনও পর্যন্ত ২৭ জনের বেশি মেয়ে নিখোঁজ রয়েছে। এই ঘটনায় গোটা রাজ্য জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। উদ্ধারকাজে ব্যাপকভাবে যুক্ত রয়েছে কোস্ট গার্ড, ফেডারেল এজেন্সি এবং সেনাবাহিনী। ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ চললেও, প্রবল জলের গতি এবং কাদায় থমকে যাচ্ছে উদ্ধার অভিযান।
এই বন্যার সূত্রপাত হয় মাত্র কয়েক ঘণ্টার প্রবল বর্ষণে। ৪ জুলাই সকাল থেকেই টেক্সাসের বিভিন্ন এলাকায় ১০–১৫ ইঞ্চি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়। এর ফলে গুয়াডালুপ নদীর জলস্তর দ্রুত বেড়ে যায় এবং একপর্যায়ে তা ২৬ ফুট ছাড়িয়ে যায়। অতিরিক্ত জলে বাঁধ ভেঙে যায় এবং মধ্য টেক্সাসের কের কাউন্টিতে হু হু করে ঢুকে পড়ে। তারপর একে একে প্লাবিত হয়ে পড়ে রাজ্যের বিভিন্ন শহর ও জনপদ। যদিও ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস আগেই বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছিল, অনেক বাসিন্দার অভিযোগ, যথাযথ সময়ে সতর্কতা পৌঁছায়নি, ফলে তারা প্রস্তুতি নিতে পারেননি।
পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট রাজ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প বন্যা কবলিত অঞ্চল পরিদর্শন করেন এবং এটিকে শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলে উল্লেখ করেন। ফেডারেল দুর্যোগ সহায়তা তৎক্ষণাৎ ঘোষণা করা হয়। ১৫টি হেলিকপ্টার, ১৫টি ড্রোন এবং প্রায় ৫০০ জন উদ্ধারকর্মী দিয়ে চলছে উদ্ধার তৎপরতা। এ ছাড়া অনলাইনে ত্রাণের জন্য চালু হয়েছে একটি সরকারি পোর্টাল (www.disasterassistance.gov)।
এই বন্যার জেরে টেক্সাসের জনজীবন প্রায় সম্পূর্ণভাবে স্তব্ধ হয়ে গেছে। বহু পরিবার বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের অভাবে দিন কাটাচ্ছেন। খাদ্য সরবরাহ বন্ধ থাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকটও। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, স্কুল—সবকিছুই কার্যত অচল। পূর্ব উপকূলের ৯০ লক্ষের বেশি মানুষের জন্য ইতিমধ্যেই সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
২০২৫ সালের জুলাই মাস টেক্সাসবাসীর মনে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। এই বিপর্যয় দেখিয়ে দিল, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কখনই উপেক্ষা করার বিষয় নয়। ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে উন্নততর আবহাওয়া সতর্কতা ব্যবস্থা, দ্রুত সাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা এবং সুষ্ঠু ত্রাণ ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন রয়েছে। শিশুদের কান্না, মা-বাবার আহাজারি, আর জলমগ্ন শহর—এই ট্র্যাজেডি শুধু টেক্সাসের নয়, মানবতার এক চরম পরীক্ষা।
