রাজ্য – রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বর্ধিত মহার্ঘভাতা (ডিএ) সংক্রান্ত মামলা বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা তিন দিন বিচারপতি সঞ্জয় কারোল ও বিচারপতি প্রশান্তকুমার মিশ্রের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী মঙ্গলবার নির্ধারিত হলেও, তার আগেই রাজ্য সরকার নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে ফের একটি পিটিশন জমা দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, নতুন পিটিশনে রাজ্য সরকার জানিয়েছে যে ডিএ-র হার কোনও নির্দিষ্ট সূচক বা সূত্রের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় না; বরং এটি নির্ভর করে রাজ্যের আর্থিক সামর্থ্য ও রাজস্ব নীতির উপর। পাশাপাশি দাবি করা হয়েছে, সরকারি কর্মচারীদের ডিএ বাবদ সমস্ত বকেয়া ইতিমধ্যেই মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে, ফলে এই মুহূর্তে কোনও বকেয়া পরিশোধের প্রশ্নই ওঠে না।
এর আগে আদালত পর্যবেক্ষণ করেছিল যে ডিএ সরকারি কর্মচারীদের মৌলিক অধিকার নয়। যদিও মামলাকারী পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি দেন, ডিএ তাঁদের আইনি অধিকার এবং এর নির্ধারণে নীতি বা প্রথা ভঙ্গ হলে বেতন কাঠামোয় বৈষম্য তৈরি হয়, যা আইনি চ্যালেঞ্জের যোগ্য। এই প্রেক্ষিতে আদালত কৌতূহল প্রকাশ করে জানতে চেয়েছিল, অল ইন্ডিয়া কনজ়িউমার প্রাইস ইনডেক্স (AICPI) অনুযায়ী কি ডিএ নির্ধারিত হয় এবং যদি তা-ই হয়, তবে কেন দিল্লির বঙ্গভবন বা চেন্নাইয়ের ইউথ হস্টেলে কর্মরত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মচারীরা যে হারে ডিএ পান, রাজ্যে কর্মরতরা সেই হার পান না।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মামলার প্রভাব কেবল পশ্চিমবঙ্গেই সীমাবদ্ধ নয়, গোটা দেশেই পড়তে পারে। যদি রাজ্যের যুক্তি আদালত মেনে নেয়, তবে অন্যান্য রাজ্যের ক্ষেত্রেও ডিএ প্রদানের নীতি বদলাতে পারে। বিপরীতে, মামলাকারী পক্ষের দাবি সঠিক প্রমাণিত হলে কেন্দ্রীয় সূচক মেনে ডিএ প্রদান বাধ্যতামূলক হয়ে যাবে, যা বহু রাজ্যের অর্থনীতিতে চাপ ফেলতে পারে।
রাজ্যের দাবি, রাজস্ব পরিস্থিতি অনুযায়ী ডিএ নির্ধারণ যুক্তিসঙ্গত এবং কোনও বকেয়া নেই। অন্যদিকে, কর্মচারী সংগঠনগুলির অভিযোগ, ডিএ নির্ধারণে স্বচ্ছ সূত্র থাকা উচিত এবং তা কেন্দ্রীয় সূচক মেনে হওয়া প্রয়োজন। একই রাজ্যের কর্মচারীরা কর্মস্থলভেদে ভিন্ন হারে ডিএ পাওয়া সাংবিধানিকভাবে অন্যায্য বলেও তাঁদের অভিযোগ।
সব মিলিয়ে, মঙ্গলবারের শুনানি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে। আদালত রাজ্যের নতুন পিটিশনের যুক্তি ও প্রমাণ যাচাইয়ের পাশাপাশি বৈষম্য সংক্রান্ত প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশ দিতে পারে। ফলে ডিএ ইস্যু এখন শুধু রাজ্যের নয়, সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের নজরে থাকা এক বড় বিতর্কে পরিণত হয়েছে।
