১০ দেশের রাষ্ট্রদূতদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার নির্দেশ দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান সেখানকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এই দশজন রাষ্ট্রদূত তুরস্কে জনহিতৈষীকর কাজের জন্য পরিচিত ওসমান কাভালার মুক্তি দাবি করে বিবৃতি দিয়েছিলেন।
তুরস্কে ২০১৩ সালে দেশব্যাপী বিক্ষোভে অর্থায়ন এবং ২০১৬ সালে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে ওসমান কাভালা ২০১৭ সাল থেকে কারাগারে রয়েছেন। যদিও তিনি দোষী সাব্যস্ত হননি। এবং কাভালা এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। গত ১৮ অক্টোবর এক যৌথ বিবৃতিতে, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতেরা ওসমান কাভালার মামলার একটি ন্যায়সঙ্গত ও দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানান।
তাঁরা কাভালার ‘অবিলম্বে মুক্তির আহ্বানও জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই রাষ্ট্রদূতদের তলব করে তাঁদের বিবৃতিকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে অভিহিত করে এবং অসন্তোষ জানায়।এ ছাড়া ইউরোপের প্রধান মানবাধিকার নজরদারি সংস্থা কাউন্সিল অব ইউরোপ তুরস্ককে দেওয়া এক চূড়ান্ত সতর্ক বার্তায় বিচারের মুখোমুখি না করা পর্যন্ত ওসমান কাভালাকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানায়।
কাভালার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ? ওসমান কাভালাকে ২০১৩ সালে দেশব্যাপী প্রতিবাদ বিক্ষোভ সংগঠিত করার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়, কিন্তু এর পরপরই আবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর তাঁকে খালাস দেওয়ার রায় নাকচ করে দেওয়া হয় এবং ২০১৬ সালে এরদোয়ান সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ আনা হয়। যদিও ওসমান কাভালা তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন।
আর ও পড়ুন হাবড়ার জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শনে রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক
এরদোয়ান গতকাল শনিবার এসকিসেহির শহরে জনতার উদ্দেশে এক ভাষণে বলেন, রাষ্ট্রদূতেরা ‘তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসে নির্দেশ জারির সাহস দেখাতে পারেন না।’ তুর্কি প্রেসিডেন্ট তিনি বলেন, ‘আমি আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছি এবং বলেছি কী করতে হবে। এই দশ রাষ্ট্রদূতকে অবিলম্বে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতে হবে, আপনি অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন।’ তবে বাস্তবে কী হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তুরস্কের সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, এরদোয়ান বলেছেন—রাষ্ট্রদূতদের তুরস্কের বাস্তবতা বুঝতে হবে, নয়তো তুরস্ক ছেড়ে যেতে হবে।
রাষ্ট্রদূতদের তরফ থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে, নরওয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে—তাদের রাষ্ট্রদূত ‘এমন কিছু করেননি, যে কারণে তাঁকে বহিষ্কার করতে হবে।’ তবে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেছেন, তিনি দশ বিদেশি রাষ্ট্রদূতের কূটনৈতিক মর্যাদা ও অধিকার প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। এর আগে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রদূতদের তলব করে এবং কাভালা ইস্যুতে তাঁদের দেওয়া বিবৃতিকে ‘দায়িত্বহীন’ বলে প্রতিবাদ জানায়। রাষ্ট্রদূতদের বিবৃতিতে ওসমান কাভালাকে বিচারের মুখোমুখি করতে ‘অব্যাহত বিলম্বের’ সমালোচনা করা হয় এবং বলা হয়—এই দীর্ঘসূত্রিতা ‘গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং তুরস্কের বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করছে।’ বিবৃতিতে ‘তুরস্ককে কাভালাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে বলা হয়।’