বন্যার ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে হাইকোর্টে মামলা দায়ের বাম ও কংগ্রেসের

বন্যার ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে হাইকোর্টে মামলা দায়ের বাম ও কংগ্রেসের

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram

বন্যার ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে হাইকোর্টে মামলা দায়ের বাম ও কংগ্রেসের, তৃণমূল নেতাদের মদদে সরকারি কর্মচারীর একাউন্টে ৬৯ লক্ষ টাকা ঢোকানোর অভিযোগ, অট্টালিকার মত বাড়ি কর্মচারীর, বিডিওর বিরুদ্ধেও হাইকোর্টে অভিযোগ দায়ের,আইন আইনের পথে চলবে সাফাই তৃণমূল নেতৃত্বের, শুরু তরজা
মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর বন্যার ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে আবার চাঞ্চল্য কর অভিযোগ তুলল কংগ্রেস ও সিপিএম নেতৃত্ব। তাদের দাবি হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের বন্যা ত্রাণের টাকা এলাকায় শাসকদলের নেতা সহ ওই ব্লকের বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মচারীর একাউন্টে ঢুকানো হয়েছে। বন্যার ত্রাণ কেলেঙ্কারি দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন এলাকার সিপিআইএম এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব। আসন্ন সপ্তাহে এই মামলা হাইকোর্টে উঠতে চলেছে।

 

এই মামলাতে বিডিওর বিরুদ্ধেও একই সঙ্গে অভিযোগ দায়ের করেছে কংগ্রেস এবং সিপিএম নেতৃত্বের। পাশাপাশি বিরোধীরা অভিযোগ করেছে হরিশ্চন্দ্রপুর ২ ব্লকের গ্রুপ সি কর্মচারীর একাউন্টেই শুধু ৬৯ লক্ষ টাকা ঢোকানো হয়েছে। এমনকি তারা প্রশ্ন তুলেছেন ঐ কর্মচারি হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের বাসিন্দা হয়ে কি করে ২ নম্বর ব্লকের ক্ষতিগ্রস্ত দের টাকা তার একাউন্টে ঢুকে। শুধু তাই নয় ওই কর্মচারী চাকরি পাওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই আশ্চর্য জনক ভাবে তার গ্রামে বিশাল বিলাসবহুল প্রাসাদ তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ। সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব অভিযোগও করেছেন যে ত্রাণ কেলেঙ্কারির ঘটনা সামনে আসার পরই এই কর্মচারী তার অ্যাকাউন্টে ঢোকা টাকার কিছু অংশ ইতিমধ্যেই ট্রেজারিতে জমা করেছেন। বিরোধী দলগুলির এই অভিযোগ সামনে আশায় হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকা জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বলে খবর।

আরও পড়ুন –গর্ভবতীকে কাঁচি দিয়ে পেটে আঘাত করার অভিযোগে পুলিস এক মহিলাকে গ্রেপ্তার করেছে

প্রসঙ্গত ২০১৭ সালে হরিশ্চন্দ্রপুরে বিধ্বংসী বন্যায় ক্ষতি-গ্রস্ত হয়েছিল লক্ষ লক্ষ মানুষ। সেই ক্ষতি-গ্রস্ত মানুষদের জন্য রাজ্য-সরকার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর এবং ২ নম্বর ব্লকে কয়েক দফায় ৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। এর মধ্যে প্রায় ২০ কোটি টাকা হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকে বরাদ্দ করা হয়েছিল। এরপরই ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ক্ষতি-পূরণের টাকা বিলি করার সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় প্রশাসন। পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েত গুলিতে যুক্ত করে ক্ষতি-গ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হয়। তারপরই অভিযোগ ওঠে এই তালিকায় ব্যাপক পরিমাণ দুর্নীতি করা হয়েছে। প্রকৃত ক্ষতি-গ্রস্তদের টাকা না দিয়ে বন্যা ত্রাণের টাকা শাসকদল মদদপুষ্ট বেশ কয়েকজন ব্যক্তি, তৃণমূল নেতা এমনকি ব্লক ও পঞ্চায়েত স্তরে বিভিন্ন সরকারি আধিকারিক, জেলা পরিষদ সদস্যদের একাউন্টে ঢুকানো হয়েছে।

 

ইতিমধ্যেই এই নিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি এবং বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতের জন-প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় হাইকোর্টে। এই মামলার জেরে হাইকোর্টের নির্দেশে বেশ কয়েকজন জন-প্রতিনিধির জেল পর্যন্ত হয়। এরপরই হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের বন্যা ত্রাণের ক্ষতি-পূরণের টাকা নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন এলাকার কংগ্রেস নেতৃত্ব এবং বামেরা। তাদের অভিযোগ হরিশ্চন্দ্রপুর এক নম্বরের মতই হরিশ্চন্দ্রপুর দু’নম্বর ব্লক এলাকাতেও ব্যাপক পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে। এই নিয়ে তথ্য জানার অধিকার আইন সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব যুগ্মভাবে এ বিষয়ে তথ্য দেওয়ার জন্য ব্লক আধিকারিকের নিকট দরখাস্ত প্রদান করেন। কিন্তু এই আবেদন ফলপ্রসূ না হয়ে তারা অবস্থান-বিক্ষোভ এ বসেন ব্লক চত্বরে।

 

এর পরি-প্রেক্ষিতে হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের বিডিও তাদের ক্ষতি-গ্রস্তদের তালিকা প্রদান করলেও সেই তালিকায় ক্ষতি-গ্রস্তদের অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং ব্যাংকের যাবতীয় তথ্য ঢেকে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তারপরই এলাকার সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব অভিযোগ করে হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক এলাকায় বন্যা ত্রাণের টাকা ব্যাপক হারে নয় ছয় করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের একাউন্টেও টাকা ঢুকানো হয়েছে ব্যাপক হারে। অভিযোগ ভোলানাথ চৌধুরী বলে হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের গ্রুপ সি কর্মচারীর একাউন্টে ৬৯ লক্ষ টাকা ঢুকানো হয়েছে। যদিও তার বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক এলাকার পিপলা গ্রামে।

 

পাশাপাশি আরও অভিযোগ এই কর্মচারী চাকরির কয়েক বছরের মাথাতেই তার নিজের গ্রামে বিশাল প্রাসাদের মতো বাড়ি তৈরি করেছেন। যে বাড়িতে একাধিক অত্যাধুনিক সুবিধা পর্যন্ত রয়েছে। এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার বাম এবং সিপিএম নেতারা। যদিও পাশাপাশি অভিযোগ এই কেলেঙ্কারির কথা সামনে আসার পরই বেশ কিছু পরিমাণ টাকা ঐ কর্মচারি ট্রেজারিতে ফিরিয়ে দিয়েছেন বলে এলাকার বিরোধীদল গুলির অভিযোগ। তারা প্রশ্ন তুলেছেন চাকরির কয়েক বছরের মাথায় কিভাবে ওই কর্মচারী রাজপ্রাসাদ তৈরি করেছেন তার গ্রামে এই নিয়ে তদন্ত করা উচিত। আর ১ নম্বর ব্লক এলাকার বাসিন্দা হয়ে তার একাউন্টে কিভাবে ২ নম্বর ব্লকের ক্ষতি-পূরণের টাকা ঢুকানো হয় এই নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

 

যদিও ওই অভিযুক্ত হরিশ্চন্দ্রপুর ২ ব্লকের কর্মচারী ভোলানাথ চৌধুরী সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

এদিকে ২০১৭ সালের বন্যার ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা অসম্পূর্ণ প্রদান করা হয় বিডিও এর বিরুদ্ধেও হাইকোর্টে অভিযোগ দায়ের করেছে কংগ্রেস এবং সিপিএম নেতৃত্ব। তাদের দাবি বিডিও উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে বন্যা ত্রাণের ক্ষতিগ্রস্ত তালিকা দিতে চাইছেন না। তাই তারা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।

 

এই সমস্ত অভিযোগ নিয়ে ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন এলাকার সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব। আসন্ন সপ্তাহে এই মামলা হাইকোর্টে উঠতে চলেছে বলে খবর। এদিকে এলাকার তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য আইন আইনের পথে চলবে। দল কোন দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়নি এবং দেবে না।

হরিশ্চন্দ্রপুর ২ ব্লক বিডিও বিজয় গিরি জানান সেই কর্মচারীর একাউন্টে কি ঢুকেছে তা আমার জানা নেই। আর আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হচ্ছে সেটা আমি মহামান্য আদালত কে জানাবো।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top