কলকাতা – এক সময় রাজ্যের বিজেপির দাপুটে নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। সামলেছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি পদও। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানকে ঘিরে নতুন জল্পনা তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের জনসভায় আমন্ত্রণ না পাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি দলের অন্দরেই ব্রাত্য হয়ে গিয়েছেন দিলীপ ঘোষ? ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটে তিনি দলের প্রার্থী তালিকায় থাকবেন কিনা, সেটিও এখন গুরুতর রাজনৈতিক প্রশ্ন।
এই পরিস্থিতিতে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন দিলীপ ঘোষ। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “আমরা রাজনীতি করি অনুমানের ভিত্তিতে নয়। আমাদের দলে একটি সুশৃঙ্খল প্রক্রিয়া রয়েছে। প্রার্থী নির্বাচন সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। সেই প্রক্রিয়া অনুযায়ীই সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “অতীতে দল আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে, নিষ্ঠার সঙ্গে তা পালন করেছি। ভবিষ্যতেও দল যে দায়িত্ব দেবে, তা সম্পূর্ণ উৎসাহের সঙ্গে পালন করতে প্রস্তুত।”
নিজের আসন খড়্গপুর নিয়ে জল্পনার জবাবেও সাফ কথা বলেন দিলীপ। তিনি জানান, “অবশ্যই খড়্গপুরই আমার আসন। ওখানকার সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। আমি ওখানকার ভোটার এবং সক্রিয় সদস্য। ফলে যদি লড়াই করি, তবে সেখান থেকেই লড়ব।” পুজোর পর খড়্গপুরে আলাদা ঘাঁটি গাড়ার সম্ভাবনা নিয়েও তিনি মন্তব্য করেন। তাঁর মতে, আপাতত স্থায়ী ঠিকানা নিউটাউন হলেও খড়্গপুরে আলাদা কেন্দ্র গড়ার প্রয়োজন নেই। কারণ, সেখানকার বিজেপি সংগঠন ইতিমধ্যেই শক্তিশালী এবং গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পার্টি সংগঠনকে নতুনভাবে গড়ে তোলার উদ্যোগ শুরু হয়েছে।
ভোটে জয়ের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, “জিতব বলেই তো লড়ছি। শুধু খড়্গপুর নয়, জেলার প্রতিটি আসনে জয়ের জন্য আমরা লড়ব।” নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি আপাতত চিন্তিত নন বলেই জানালেও, বিজেপির অন্দরেই তাঁর ভূমিকা নিয়ে জল্পনার পারদ ক্রমশ চড়ছে।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় আমন্ত্রণ না পেয়ে দিলীপ ঘোষ বেঙ্গালুরুতে ধর্মগুরু রবিশংকরের আশ্রমে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে তিনি খোলাখুলি ভাষায় দলের নব্য নেতৃত্বকে আক্রমণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর জনসভা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে দিলীপ বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চে কারা ছিলেন? ভাল করে দেখুন, সবই দলবদলু — শুভেন্দু অধিকারী, তাপস রায়, অর্জুন সিং, সজল ঘোষ… আর ক’টা নাম বলব! এঁরা কি বিজেপি? এঁদের দেখে মানুষ বিজেপিতে যোগ দেবেন? এঁদের বিরুদ্ধেই তো আমরা লড়াই করেছি। ফলাফল স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর জনসভা কার্যত ফাঁকা থেকেছে।”
দিলীপ ঘোষের এই স্পষ্টভাষী মন্তব্য ও খোলামেলা অবস্থান রাজ্য রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে। বিজেপির অভ্যন্তরীণ সমীকরণে তাঁর ভূমিকা আগামী দিনে কীভাবে গড়ে উঠবে, সেটাই এখন রাজনৈতিক মহলের প্রধান আলোচনার বিষয়।




















