বর্ধমান – উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গও এখন জলের তলায়। একের পর এক এলাকায় প্লাবন, ভেঙে পড়েছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে নদীর জলে। দামোদরে ডিভিসির জলছাড়ে ফুঁসছে নদী, আর সেই নদীরই প্রবল স্রোতে ঘটল এক অবিশ্বাস্য ঘটনা।
বর্ধমানের রায়নার হিজলনা জাকতা গ্রামের বাসিন্দা মাতুরি টুডু, বয়স প্রায় পঁয়ষট্টি। রবিবার দুপুরে একাই তিনি স্নান করতে গিয়েছিলেন দামোদর নদে। কিন্তু সেদিনের নদী ছিল ভয়ঙ্কর রূপে—নিম্নচাপজনিত বৃষ্টি ও জলছাড়ে নদীর স্রোত তীব্র হয়ে উঠেছিল। হঠাৎই সেই স্রোতে ভেসে যান মাতুরি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদীর প্রবল স্রোতের সঙ্গে লড়াই করে ভেসে চলেন তিনি।
অবশেষে সন্ধের দিকে মুইদিপুরের কাছে স্থানীয়রা শুনতে পান এক নারীর আর্তচিৎকার—“বাঁচাও, বাঁচাও!” তড়িঘড়ি সেখানে ছুটে যান গ্রামবাসীরা। দেখা যায়, নদীর জলে এক মহিলা প্রাণপণে ভেসে থাকার চেষ্টা করছেন। খবর দেওয়া হয় জামালপুর থানায়। পুলিশ ও স্থানীয়দের তৎপরতায় তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে জামালপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘক্ষণ জলে থাকার কারণে তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। পরে তাঁকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় চিকিৎসার জন্য।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাতুরি বলেন, “দামোদরে স্নান করতে নেমেছিলাম। হঠাৎ স্রোত বেড়ে যাওয়ায় ভেসে যাই। পরে কিছু ধরে আটকে থাকতে পারি, তখনই লোকজন আমাকে উদ্ধার করে।” জামালপুর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি মেহেমুদ খাঁন জানান, “বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে তাঁর পরিচয় জানা গেলে পুলিশ তাঁকে পরিবারের হাতে তুলে দেয়।”
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি—দামোদরের প্রবল স্রোতে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার ভেসে গিয়ে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হন মাতুরি টুডু। ভাগ্যজোরেই যেন এক অলৌকিকভাবে বেঁচে ফিরলেন তিনি।
