দিল্লির নেতৃত্বে ক্ষুব্ধ শুভেন্দু? বিজেপির অন্দরে অস্বস্তি ও কৌশলগত টানাপোড়েন

দিল্লির নেতৃত্বে ক্ষুব্ধ শুভেন্দু? বিজেপির অন্দরে অস্বস্তি ও কৌশলগত টানাপোড়েন

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram



রাজ্য – বিজেপির দিল্লির নেতৃত্বের উপর বেশ ক্ষুব্ধ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী—দলের অন্তর্গত সূত্রে এমনই খবর মিলছে। রাজনৈতিক অন্দরে জল্পনা তুঙ্গে, কারণ প্রাক্তন বিচারপতি ও তমলুকের সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যে সম্প্রতি দিল্লিকে উদ্দেশ্য করে তোপ দেগেছেন, তার পেছনে নাকি বিজেপির একাংশের পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে শুভেন্দুরও নীরব সমর্থন রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও শুভেন্দু শিবির এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে, তথাপি সূত্র বলছে—এসআইআর ইস্যু বিজেপির বিরুদ্ধে বুমেরাং হয়ে দাঁড়াতে পারে বুঝতে পেরে রাজ্যের শীর্ষ নেতারা এখন যথেষ্টই চিন্তিত।

রাজ্যের বিজেপি নেতারা বুঝতে পারছেন, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস আবারও ব্যাপক সাফল্য পেতে পারে। সাংগঠনিক দুর্বলতা, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং মাঠে কার্যকর প্রস্তুতির অভাবে বিজেপির ভেতরে হতাশা বেড়েছে। শুভেন্দু অধিকারী ও সুকান্ত মজুমদারদের আশা ছিল, দিল্লি কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির ক্ষমতা ব্যবহার করে তৃণমূলকে চাপে রাখবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। কেন্দ্রীয় সংস্থার পদক্ষেপে বরং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগ তুলে বিজেপিকে কোণঠাসা করে তুলেছেন। ফলে এসআইআর ইস্যুতে বিজেপি এখন একপ্রকার আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে।

ত্রিপুরা থেকে আসা বিজেপির এক শীর্ষ নেতা নাকি বাংলার নেতাদের সতর্ক করে বলেছেন—এসআইআর নিয়ে অতিরিক্ত রাজনীতি করলে বাংলা ও ত্রিপুরা, দুই রাজ্যেই বিজেপির বড় ক্ষতি হতে পারে। হিসাব অনুযায়ী, বাংলায় বিজেপির ভোট শেয়ার ১৮.৫ শতাংশ থেকে নেমে ২১.৩ শতাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। এমনকি অনেক হিন্দু ভোটারও ভোটার তালিকা সংশোধনের জটিলতায় বিরক্ত হচ্ছেন। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর এই অসন্তোষ আরও বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দিল্লির নেতারা মনে করছেন, রাজ্য সংগঠনকে এখন স্বনির্ভর হতে হবে, কেন্দ্রের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমাতে হবে। তবে শুভেন্দু অধিকারী নিজের রাজনৈতিক কৌশল অনুযায়ী বাংলার সরকারবিরোধী ইস্যুতে ভোটে যেতে চান। কিন্তু দিল্লির কৌশল এসআইআরের দিকে মোড় নেওয়ায় রাজ্যের বাস্তব রাজনীতি তৃণমূলের অনুকূলে ঘুরে গেছে। শুভেন্দুশিবিরের দাবি, দলের প্রাণশক্তি ও আক্রমণাত্মক রাজনীতির ধার শুভেন্দুর হাতেই রয়েছে, অথচ দিল্লি এখন সেই ধার ভোঁতা করে দিচ্ছে।

অন্যদিকে বিজেপির অভ্যন্তরে আদি বনাম নব্য বিজেপি দ্বন্দ্বও মাথাচাড়া দিচ্ছে। দিলীপ ঘোষের শিবির শুভেন্দু-শর্মীক জুটির প্রতি কতটা সদিচ্ছা রাখছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। আবার দিলীপ ঘোষের অসন্তোষ মিটতে না পারলে তিনিও সম্পূর্ণভাবে সক্রিয় হবেন না বলে জানা গিয়েছে। অন্যদিকে, মিঠুন চক্রবর্তীর মন্তব্য—“এবার না জিতলে আমাদের সব শেষ”—দলের উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

রাজ্যের বিজেপি সংগঠনে হতাশা স্পষ্ট। এক নেতা সরাসরি বলেন, “আমাদের অবস্থা বাম আমলের প্রদেশ কংগ্রেসের মতো। দিল্লিকে বলেও কিছু হয় না। একসময় তৃণমূল যেমন গড়ে উঠেছিল সিপিএমের বিরুদ্ধে, আমাদের ক্ষেত্রেও তেমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।” শুভেন্দু শিবিরের এখন একমাত্র লক্ষ্য, এসআইআর ইস্যু থেকে ফোকাস সরিয়ে রাজ্য সরকারের দুর্নীতি, প্রশাসনিক ব্যর্থতা এবং সিএএ বাস্তবায়নের দিকে নজর ফেরানো।

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এখন রাজ্যজুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, এসআইআর ইস্যুর ড্যামেজ কন্ট্রোলে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি বলছেন, “এসআইআর-এ ক্ষতি হবে তৃণমূলের, বহু বহিরাগত পালিয়ে যাচ্ছে।” কিন্তু বাস্তবে বিজেপির নেতারা দেখছেন, রাজবংশী ও মতুয়া সংগঠনের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। হিন্দু ভোটারদের একাংশও বঞ্চনার আশঙ্কায় আতঙ্কিত। ফলে বিজেপির অন্দরে চাপা রোষ, আর মুখ খোলার অবস্থা নেই কারও।

দিল্লির সঙ্গে শুভেন্দুর অস্বস্তিকর দূরত্ব আরও বেড়েছে। সূত্র বলছে, তিনি ইতিমধ্যে দিল্লির বৈঠকে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন এবং খুব শিগগিরই আবার সরাসরি সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিজের বক্তব্য জানাবেন। তাঁর সঙ্গে সুকান্ত মজুমদারও থাকবেন। অন্যদিকে, রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য প্রকাশ্যে নরমপন্থী হলেও, দলের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনিও নিজের মতামত জানিয়েছেন। সবমিলিয়ে বিজেপির রাজ্য রাজনীতিতে এখন অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও কৌশলগত বিভাজনের চিত্রই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top