দিল্লি – দিল্লির সেন্ট কলম্বাস স্কুলের দশম শ্রেণির এক ছাত্রের আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে। মানসিক হয়রানির অভিযোগে স্কুল কর্তৃপক্ষ চারজন শিক্ষাকর্মী—চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণির প্রধানশিক্ষিকা, নবম–দশমের কোঅর্ডিনেটর এবং দুই শিক্ষককে সাময়িকভাবে সাসপেন্ড করেছে। অভিযোগ দায়ের ও তদন্ত শুরু হওয়ার পরই স্কুল এই পদক্ষেপ নেয়। তদন্ত সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাখা হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।
ঘটনার কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে রয়েছে ওই ছাত্রের গুরুতর অভিযোগ। মাত্র ১৬ বছরের কিশোরটি জানিয়েছিল, দীর্ঘদিন ধরে কয়েকজন শিক্ষক তার প্রতি মানসিক নির্যাতন চালাচ্ছিলেন। বুধবার বিকেলে রাজেন্দ্র প্লেস মেট্রো স্টেশনে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে সে আত্মহত্যা করে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরিবারের দাবি, বারবার স্কুলকে অভিযোগ জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ছেলের মানসিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল, কিন্তু শিক্ষকরা কঠোর ও অপমানজনক আচরণই চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
ঘটনার পর দিল্লির শিক্ষা দফতর একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ছাত্রের অভিযোগ, স্কুলের ভূমিকা, এবং আগের অভিযোগগুলির প্রতি প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া—সব দিক খতিয়ে দেখা হবে বলে দফতর জানায়।
এদিকে, সাসপেনশনের সিদ্ধান্তেও সন্তুষ্ট নন ছাত্রের বাবা প্রদীপ পাটিল। তাঁর অভিযোগ, এ শুধু সাময়িক ব্যবস্থা। যাদের নামে এফআইআর হয়েছে, তাঁদের তৎক্ষণাৎ গ্রেফতার করা উচিত। তিনি জানান, ছেলে একটি সুইসাইড নোট রেখে গেছে, যেখানে তিনজন শিক্ষক ও প্রিন্সিপালের নাম রয়েছে। সেখানে মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি মা ও ভাইয়ের কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং মৃত্যুর পর অঙ্গদানের ইচ্ছার কথাও লিখেছিল কিশোরটি।
পরিবার আরও জানিয়েছে, ছেলের অত্যাচারের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁরা ইতিমধ্যেই স্কুল বদলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। পরীক্ষার আর মাত্র দশদিন থাকতে তারা অপেক্ষা করতে বলেছিলেন। কিন্তু ঘটনার তিনদিন আগে স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক নাকি জানিয়েছিলেন, ছাত্রটিকে বহিষ্কারের পরিকল্পনা চলছে। এতে সে ভীষণভাবে ভেঙে পড়ে।
প্রদীপ পাটিল আরও অভিযোগ করেন, ঘটনার আগের দিন ড্রামা ক্লাসে ছেলে পিছলে পড়ে যাওয়ার পর শিক্ষক তাকে ‘অতিরঞ্জিত অভিনয়’ বলে বিদ্রূপ করেন। কান্না শুরু করলে শিক্ষক নাকি বলেন—‘নাটক করে লাভ নেই, এতে কিছুই বদলাবে না।’ সবার সামনে এই অপমান সহ্য করতে পারেনি তাঁর ছেলে।
ছাত্রের আত্মহত্যার ঘটনায় রাজেন্দ্র নগর থানায় প্ররোচনার ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। পুলিশ ইতিমধ্যেই সহপাঠী, শিক্ষক ও স্কুল প্রশাসনের বয়ান নিচ্ছে। এখনও পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আসেনি, তবে সুইসাইড নোটকে কেন্দ্র করে তদন্ত উল্লেখযোগ্যভাবে এগোচ্ছে। পাশাপাশি, পরিবার বারবার অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও স্কুলের কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।



















