দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছরের খরা কাটিয়ে শৈশব ফিরে পেতে স্কুলমুখী হতে চলেছে সীমান্ত থেকে সুন্দরবনের পড়ুয়ারা ।। চেনা ছন্দে ফিরে স্কুল প্রাঙ্গণে পড়ুয়াদের কোলাহল শোনার জন্য উদগ্রীব শিক্ষকরাও। দু’বছরের করোনা ও দু’মাসের গরমের ছুটির পর অবশেষে চেনা ছন্দে ফিরতে চলেছে রাজ্যের স্কুল গুলি। আর তাতেই খুশির হাওয়া সীমান্ত থেকে সুন্দরবনের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে। দীর্ঘ দুই বছর করোনা অতিমারিকে কাটিয়ে চলতি বছরের ৩রা ফেব্রুয়ারি রাজ্যের বিদ্যালয় গুলি খুলেছিল।
কিন্তু আড়াই মাস যেতে না যেতেই গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে পুনরায় প্রায় দুই মাসের গরমের ছুটি দিতে বাধ্য হয়েছিল রাজ্য সরকার। সেই ২০২০ সালের মার্চ মাসে বন্ধ হয়েছিল বিদ্যালয় গুলি। তাই বলা যেতে পারে অবশেষে প্রায় আড়াই বছর পর পূর্ণাঙ্গ রূপে খুলতে চলেছে রাজ্যের স্কুল গুলি। একদিকে পড়ুয়ারা যেমন নিজেদের সহপাঠীদের সাথে দেখা করার জন্য উদগ্রীব হয়ে রয়েছেন অন্যদিকে শিক্ষকরা প্রহর গুনছেন স্কুলের চেনা সেই পড়ুয়াদের কোলাহল শোনার জন্য।
বসিরহাট মহকুমার সুন্দরবনের হাড়োয়া, মিনাখাঁ ও হাসনাবাদের মতো ৬টি ব্লক সহ বসিরহাট ১, বাদুড়িয়া ও স্বরূপনগরের মত সীমান্তবর্তী ব্লকে রয়েছে প্রায় ১২৫৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৫টি জুনিয়র হাই স্কুল, মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে ১২৪টি, হাই স্কুলের সংখ্যা রয়েছে ১১৮টি ও সরকারি মাদ্রাসা রয়েছে ৩০টি। সেগুলি আগামীকাল ২৭শে জুন সোমবার থেকে খুলতে চলেছে। যার ফলে আবার স্কুলমুখী হবে মহকুমার প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ শিক্ষার্থী। কিন্তু চিন্তার বিষয়, ইতিমধ্যে দেশে করোনা সংক্রমনের হার দিনে দিনে বেড়েই চলেছে।
তাই স্বভাবতই চিন্তায় রয়েছে রাজ্য শিক্ষা দপ্তর। রাজের শিক্ষা সচিব স্কুলগুলিতে করোনা মোকাবিলার জন্য কোভিডের নিয়মাবলী মেনে স্কুল খোলার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রত্যেক জেলার অতিরিক্ত জেলা শাসক (শিক্ষা)দের নোডাল অফিসার হিসেবে নিযুক্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার কথা বলা হয়েছে সরাসরি জেলা শাসককে। রবিবারের মধ্যে সেই রিপোর্ট পৌঁছাবে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরে। দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মীদের শনিবার থেকেই স্কুলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন – একদিনের উড়িষ্যা সফরে গেলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ
ইতিমধ্যে বসিরহাট মহকুমার সন্দেশখালি ১ ও ২, হিঙ্গলগঞ্জ, হাড়োয়া, বসিরহাট ২, স্বরূপনগর ও হাসনাবাদ সহ দশটি ব্লকের প্রত্যেকটি স্কুলেই কোভিড বিধি মেনে স্কুল পরিষ্কার করার কাজ চলছে। বিভিন্ন স্কুলে গেলে দেখা যাচ্ছে কোথাও চলছে স্যানিটাইজেশন আবার কোথাও ধুলো জমা বেঞ্চ গুলিকে ঝাঁড় দেওয়া ও মোছার কাজ চলছে। পাশাপাশি শৌচালয় থেকে শুরু করে স্কুল প্রাঙ্গনে যেখানে যেখানে ময়লা আবর্জনা জমে রয়েছে বা ঝোপঝাড় গুলিকে কেটে পরিষ্কার করার কাজ চলছে। দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছর ধরে বাড়িতে থেকে থেকে অনলাইন ক্লাস করে এক প্রকার ঘরবন্দী জীবন কাটাতে হচ্ছিল পড়ুয়াদের। সেই সমস্যার সমাধান হওয়ায় যথেষ্ট খুশির হওয়া পড়ুয়াদের মধ্যেও।
শিক্ষকরাও চাইছেন স্কুল প্রাঙ্গণ গুলি চেনা ছন্দে ফিরুক। ছাত্র-ছাত্রীদের চিল চিৎকারে ভরে উঠুক বিদ্যালয় গুলি। আবার অন্যদিকে অভিভাবকরা বলছেন কোভিড বিধি মেনে যেন তাদের সন্তানদের পড়াশোনা করানো হয়। কিন্তু এতদিন পরে অবশেষে তাদের সন্তানরা স্কুলমুখী হয়ে ফিরে পাবে তাদের শৈশব। সেই আনন্দেই উদ্বেলিত অভিভাবকরাও। তবে দীর্ঘদিনের এই পড়াশোনার খরা কাটিয়ে অবশেষে যে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে চলেছে স্কুলগুলি সে কথা বলাই বাহুল্য।