দুর্গাপূজার আগে গরিব মানুষের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ সেই সঙ্গে মেডিকেল ক্যাম্প, অনুষ্ঠিত হলো ক্লান্তিতে।। থ্যালাসেমিয়া ও ব্লাড ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা শিবিরের পাশাপাশি দুর্গাপুজোতে উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার প্রান্তিক মাগুড়মাড়ি (ক্রান্তি) গ্রামে দুঃস্থ শিশু, বিধবা ও বয়স্ক মানুষজনের হাতে নতুন বস্ত্র তুলে দিল ‘আর্যভ’।
পুজো মানেই শরতের আকাশে কাশের দোলা! আর সেই দোলায় যদি প্রান্তিক মানুষের মুখে হাসি ফোটানো যায় তাহলে ক্ষতি কি? রাজ্যের দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গ সর্বত্র প্রান্তিক মানুষজনের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্যের হাত বার বার বাড়িয়ে দেয় ‘আর্যভ’। অতিমারীর কালেও তা থেকে ব্যতিক্রম ঘটেনি। চারিদিকে কর্ম-সংকট, কষ্টের মধ্যে দিনযাপনের মধ্যেও নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখায় কলকাতার ‘আর্যভ ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ নামে একটি সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
যাঁদের কাছে নতুন জামা-কাপড় থেকে শীতবস্ত্র বিলাসিতা! সেই সব মানুষের পাশে এক দশক ধরে দাঁড়িয়ে এসেছে এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ‘মানুষ হয়ে মানুষের পাশে’ এসে দাঁড়ানোয় সংস্থার মূল লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই ‘আর্যভ’-র সদস্যরা ছুটে যায় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। করোনা পরিস্থিতিতেও থেমে ছিল না তাঁরা। আমফানের দুর্যোগে সুন্দরবনের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি কোভিড-১৯ পরিস্থিতির মাঝে সরকারি নির্দেশাবলী মেনে কাজ করেছে চলেছেন সংস্থার সদস্যরা।
আরও পড়ুন – ডুয়ার্স কাপাতে চাইছে ময়নাগুড়ি সানরাইজ ক্লাবের দুর্গা পুজো
মূলত,থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত ছেলে-মেয়েদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেও পুজো ও শীতে ছুটে যায় দুঃস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়াতে। কলকাতা সহ হুগলি, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা, নদীয়া, বীরভূম জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে সেখানকার দুঃস্থ অসহায় দরিদ্র মানুষ গুলির হাতে তাঁদের প্রয়োজনীয় জামা-কাপড়, শীতবস্ত্র, টুপি, কম্বল প্রভৃতি তুলে দিয়েছেন বিগত বছর গুলিতে।
শুক্রবার জলপাইগুড়ি জেলার মাগুড়মাড়ি (ক্রান্তি) গ্রামে থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা শিবির এবং দুর্গাপুজো উপলক্ষে দুঃস্থ শিশু, বিধবা ও বয়স্ক মানুষজনের হাতে নতুন বস্ত্র তুলে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে বিবাহযোগ্য এবং অবিবাহিত নারী পুরুষদের ফ্রি থ্যালাসেমিয়া স্ক্রিনিং টেস্ট -এরও ব্যবস্থা করা হয় আর্যভ-র পক্ষ থেকে। থ্যালাসেমিয়া ও ব্লাড ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা শিবিরে বক্তব্য রাখেন কলকাতার প্রখ্যাত হেমাটো-অঙ্কোলজিস্ট চিকিৎসক দেবমাল্য ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন শিলিগুড়ির ‘অপ্টোপিক’ সংস্থার সভাপতি দীপজ্যোতি চক্রবর্তী। আর্যভ সদস্য এবং কলকাতার প্রখ্যাত হেমাটো-অঙ্কোলজিস্ট চিকিৎসক দেবমাল্য ভট্টাচার্য সাধারণ মানুষের থ্যালাসেমিয়া ও ব্লাড ক্যানসার সম্পর্কে সচেতন করেন।
তারপর সেখানকার দুঃস্থ শিশু, বিধবা ও বয়স্ক প্রায় দেড়শো জনের হাতে নতুন পোশাক বিতরণ করা হয়। বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ‘আর্যভ’-র সম্পাদক চিরঞ্জীব গোস্বামী, অন্য সদস্যদের মধ্যে রাজা চক্রবর্তী, সৌরজিৎ দাস, রামকৃষ্ণ বসাক, চিকিৎসক সদস্য সৌভিক সর্দার। ‘আর্যভ’-র সভাপতি তথা অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন। সভাপতি তথা অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী বলেন,‘সমাজের আলোকবৃত্ত থেকে যাঁরা এখনও বঞ্চিত এবং ভৌগলিক গত কারনে প্রান্তিক অবস্থানের জন্য সব কিছু থেকে যাঁরা পিছিয়ে রয়েছেন, তাঁদেরকে সমাজের মূলস্রোতে নিয়ে আসার জন্য সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে আরো বেশি করে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সার্থকতা।’
‘আর্যভ’-র সম্পাদক চিরঞ্জীব গোস্বামী বলেন,‘যে সমস্ত মানুষের কাছে সরকারি-বেসরকারি অনুদান বা সাহায্য এখনও সেভাবে পৌঁছায় না, আমাদের সোসাইটির সদস্যরা জন্মলগ্ন থেকেই তাঁদের পাশেই থেকে এ ধরনের কাজ করে আসছি। থ্যালাসেমিয়া-ক্যানসার সম্পর্কে এদিন সচেতনতা করেন প্রখ্যাত হেমাটো-অঙ্কোলজিস্ট চিকিৎসক দেবমাল্য ভট্টাচার্য। প্রাক্ শারদীয়ায় তাঁদের সঙ্গেও কিছুটা আনন্দ ভাগ করে নিতেই নতুন পোশাক বিতরণের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছিল।’