রাজ্য – দক্ষিণ আন্দামান সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি ক্রমশ শক্তি বাড়িয়ে ‘মান্থা’ (Cyclone Mantha) নামে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। প্রবল শক্তি নিয়ে এটি ধীরে ধীরে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। এর প্রভাবে ইতিমধ্যেই দেশের একাধিক রাজ্যে ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি করা হয়েছে।
আজ থেকে ঠিক ২৬ বছর আগে, একই সময়ে ওড়িশার উপকূলে আছড়ে পড়েছিল এক ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়, যা লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল বিশাল এলাকা। সেই ঘটনার ঠিক ২৬ বছর পর আবারও একই সময়ে আরেকটি ঘূর্ণিঝড়ের ল্যান্ডফলের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে এবারে মান্থার সম্ভাব্য ল্যান্ডফল অন্ধ্রপ্রদেশের কাঁকিনাড়ায়, এবং এটি ২৬ বছর আগের সুপার সাইক্লোনের তুলনায় অনেকটাই দুর্বল। অনুমান করা হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড়টি ঘণ্টায় প্রায় ১১০ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়তে পারে। মঙ্গলবার ভোরের দিকেই তার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে বলে আশঙ্কা।
রবিবার সকাল নাগাদ মান্থা অতি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয় এবং ঘণ্টায় ছয় কিলোমিটার গতিতে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে এগোতে থাকে। ইতিমধ্যেই উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে—আকাশ মেঘলা, সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া ও বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি।
দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়া পরিস্থিতি:
সোমবার সকালে দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ জেলায় আকাশ আংশিক মেঘলা। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলায় বজ্রবিদ্যুৎসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে।
মঙ্গলবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে। উপকূল ও পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলিতে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বইতে পারে।
বুধবার হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা।
বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া, বীরভূম, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান এবং মুর্শিদাবাদে বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
শুক্রবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বীরভূম ও মুর্শিদাবাদে, অন্যদিকে দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। শনিবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমবে বলে পূর্বাভাস।
উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি:
উত্তরবঙ্গেও চলবে বৃষ্টি। দার্জিলিং ও কালিম্পং-এর পার্বত্য এলাকায় বজ্রবিদ্যুৎসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
বুধবার মালদা, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর এবং জলপাইগুড়িতে দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি হবে।
বৃহস্পতিবার ভারী বৃষ্টি হতে পারে মালদা, উত্তর দিনাজপুর ও জলপাইগুড়িতে।
শুক্রবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, মালদা এবং দুই দিনাজপুরে।
বজ্রবিদ্যুৎসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সঙ্গে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে দমকা বাতাস বইবে। শনিবার বিক্ষিপ্তভাবে হালকা বৃষ্টি হতে পারে উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু জেলায়।
আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৪.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর রবিবার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ ৬৮ থেকে ১০০ শতাংশ এবং গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ৩৯ মিলিমিটার।
উপকূলবর্তী জেলা প্রশাসনগুলিকে ইতিমধ্যেই সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলাগুলিতে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে, জেলেদের সমুদ্রে না যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।




















