খেলা – ভারতীয় ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য নাম—জর্জ কোস্টা। মুম্বাই সিটি এফসির প্রাক্তন এই পর্তুগিজ কোচ শুধুমাত্র মাঠে দল গড়ার কারিগর ছিলেন না, ছিলেন এক প্রকৃত নেতা, যিনি তার উপস্থিতিতে ফুটবল মাঠে ছড়িয়ে দিতেন আত্মবিশ্বাস ও কঠোর অনুশীলনের বার্তা। সোমবার হঠাৎ করেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোকে পাড়ি দেন ৫৩ বছর বয়সী এই অভিজ্ঞ কোচ। তাঁর আকস্মিক প্রয়াণে শোকস্তব্ধ ভারতীয় ফুটবল মহল, বিশেষত মুম্বাই সিটি এফসির পরিবার।
জানা গেছে, এফসি পোর্তোর অনুশীলন চলাকালীনই হৃদরোগে আক্রান্ত হন কোস্টা এবং দ্রুতই সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে না ফেরার দেশে চলে যান তিনি। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই নেমে আসে শোকের ছায়া। মুম্বাই সিটি এফসি তাদের সরকারি এক্স হ্যান্ডেলে গভীর শোকপ্রকাশ করে লেখে, “আমাদের প্রাক্তন কোচ জর্জ কোস্টার মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তিনি একজন নেতা, একজন যোদ্ধা এবং মুম্বাই সিটি পরিবারের একজন অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন। ২০১৮ থেকে ২০২০ পর্যন্ত তিনি দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি এবং পরিবারের প্রতি রইল আমাদের সমবেদনা।”
২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মুম্বাই সিটি এফসির দায়িত্বে ছিলেন জর্জ কোস্টা। তাঁর কোচিংয়ে দল খেলেছিল ৩৯টি ম্যাচ। সেমিফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছলেও কাঙ্ক্ষিত শিরোপা ছুঁতে পারেনি তারা। তবু তাঁর অনুশাসন, রণকৌশল ও ফুটবল দর্শন আজও মনে রেখেছেন ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীরা।
তবে কোস্টার কৃতিত্ব শুধু কোচ হিসেবে সীমাবদ্ধ ছিল না। এক সময় এফসি পোর্তোর হয়ে মাঠ কাঁপিয়েছেন তিনি এক প্রতিভাবান ডিফেন্ডার হিসেবে। তাঁর নেতৃত্বে ২০০৪ সালে পোর্তো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতে, যা পর্তুগিজ ফুটবলের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ফুটবলার হিসেবে তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ৮টি লিগ চ্যাম্পিয়নশিপ, ৫টি করে পর্তুগিজ কাপ ও সুপার কাপ, একটি উয়েফা কাপ ও একটি ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ।
এফসি পোর্তোর জার্সিতে খেলেছেন ৩৮৩টি ম্যাচ, গোল করেছেন ২৫টি। মাঠে তাঁর নেতৃত্ব, সাহসিকতা এবং সতীর্থদের প্রতি আত্মনিবেদন তাঁকে করে তুলেছিল কিংবদন্তি। তাঁর স্মরণে আগামী বুধবার ড্রাগন স্টেডিয়ামে আয়োজিত হতে চলেছে বিশেষ স্মরণসভার।
জর্জ কোস্টার আকস্মিক প্রয়াণ শুধু একটি ফুটবল ক্লাব বা একটি জাতির নয়, গোটা আন্তর্জাতিক ফুটবল দুনিয়ার অপূরণীয় ক্ষতি। কোচ, খেলোয়াড়, পথপ্রদর্শক—সবকিছু মিলিয়ে তিনি ছিলেন এক পরিপূর্ণ ফুটবল মানুষ। আজ তিনি নেই, কিন্তু তাঁর অবদান ভারতীয় ফুটবল ইতিহাসে থেকে যাবে চিরস্মরণীয় হয়ে।
