নেপাল – নেপালে দুর্নীতি ও সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজধানী কাঠমান্ডু। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে উঠেছে যে সোমবার সকালে ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে সরাসরি পার্লামেন্ট ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে। এরপরই শুরু হয় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ, যা কয়েক ঘণ্টা ধরে চলতে থাকে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, পুলিশের গুলিতে এখন পর্যন্ত ৮ থেকে ৯ জন নিহত হয়েছেন এবং অন্তত ৮০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিক্ষোভকারীরা যখন পার্লামেন্টের প্রধান গেটে আগুন ধরিয়ে দেয়, তখন পুলিশকে “দেখামাত্র গুলি চালানোর” নির্দেশ দেওয়া হয়। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, পুলিশ এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়েছে। তবে সরকারের দাবি, “অরাজকতা রুখতেই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিক্ষোভের পেছনে শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করাই নয়, সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির একাধিক অভিযোগও বড় ভূমিকা রেখেছে। সম্প্রতি নেপাল সরকার ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স-সহ মোট ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর পর থেকেই তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু হয়।
প্রতিবাদকারীদের স্লোগান, “দুর্নীতি বন্ধ হোক, সোশ্যাল মিডিয়া-অ্যাপ নয়।” হাজার হাজার মানুষ প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। কাঠমান্ডু পোস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী, কিছু বিক্ষোভকারী সংসদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে গাছের ডাল ও জলের বোতল ছুড়ে প্রতিবাদ জানান। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ জলকামান, টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে।
সংঘর্ষের জেরে রাজধানী কাঠমান্ডুর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। বানেশ্বর এলাকা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি ভবন, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন এবং সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতে স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত যেকোনো ধরনের জনসমাগম, বিক্ষোভ বা ঘেরাও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বর্তমানে কাঠমান্ডুতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সেনাবাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্লক থাকায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। আন্দোলনকারীরা সরকারের কাছে দুর্নীতি দমন ও সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।
সব মিলিয়ে, নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু এখন একেবারে অশান্তির কেন্দ্রবিন্দু। আগামী দিনগুলিতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
