পঞ্চায়েতের লড়াই বিজেপির সাথে,হুঁশিয়ারি উদয়নের। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়াই বিজেপির সাথে। পাশাপাশি দলে থেকে যারা দলের অভ্যন্তরে গাদ্দারী করবে তাদের বিরুদ্ধে। দিনহাটা খট্টিমারিতে তৃণমূলের সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এভাবেই বিরোধীদের পাশাপাশি দলীয় কর্মীদের হুঁশিয়ারি দিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ। আর মন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই কি পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের মাথা ব্যাথার কারণ-এ নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
লড়াই বিজেপির সাথে এবং দলের অভ্যন্তরে যারা গাদ্দার রয়েছে তাদের সাথে এহেনও বক্তব্যের পর এমন আশঙ্কা উসকে দিল রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহের বক্তব্যে বলেও মনে করছে তথ্য অভিজ্ঞ মহল। শুক্রবার রাতে দিনহাটা দুই নম্বর ব্লকের বুড়িহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের খট্টিমারি হাই স্কুলের মাঠে এক জনসভায় মন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন, এখানে তৃণমূল ছাড়া বিজেপি, সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক সহ অন্য কোন দলের অস্তিত্ব নেই। অন্য কোন দল এখানে দাঁড়ালে তাদের জামানত জব্দ করা হবে। যখন আমাদের দলের কোন গদ্দার তাদের পেছন থেকে মদত দেবে, তখনই সমস্যা বাড়বে। যারা পাঁচ বছর ধরে নানাভাবে দলকে ব্যবহার করেছে, তারা টিকিট না পেয়ে যদি দলের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় তাহলে দল তাদের ছেড়ে কথা বলবে না।
তিনি বলেন, দলের মধ্যে কেউ কেউ দিনের বেলায় তৃণমূল করছেন, আর রাতে বিজেপিকে আশ্রয় দিচ্ছেন। উদয়ন গুহ বলেন, পঞ্চায়েত ভোট হল সেমিফাইনাল, আর লোকসভা ভোট হল ফাইনাল । পঞ্চায়েত ভোটে যারা প্রধান পঞ্চায়েত হবেন তারা দল চালাবে না। আগামী দিনে দলই তাদের চালাবেন। আর পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী ঠিক করবেন গ্রামের সাধারণ মানুষ। অধিকাংশ মানুষ যাকে চাইবেন তাকে দলের প্রার্থী করা হবে। মন্ত্রী বলেন, কিছুদিনের মধ্যেই ঘরের টাকা ঢুকবে।
ঘরের জন্য কেউ টাকা নিলে, যিনি টাকা নেবেন এবং যিনি টাকা দেবেন উভয়কেই কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, বিরোধী দলের নেতা বলছে ডিসেম্বরে বড় চোর ধরা হবে। ওকে বলতে হবে আপনি বড় চোর ধরতে চান, মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের বাড়ি যান। সেখানে কেবল বড় চোর নয়, বড়, ছোট, মেজ অনেক চোর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের বাড়িতে থাকে। ওর বাড়িতে বন্দুক আছে, বোমা আছে, সমাজবিরোধীদের আশ্রয়স্থল।
আরও পড়ুন – নেইমারকে নিয়ে ব্রাজিল শিবিরে সুখবর
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দিনহাটা 2 নম্বর ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন সুকারুর কুঠি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান বিষ্ণু কুমার সরকার। মন্ত্রী উদয়ন গুহের অত্যন্ত কাছের মানুষ বলে পরিচিত ছিলেন বিষ্ণুবাবু। কিছুদিন আগে বিষ্ণু কুমার সরকারের সঙ্গে উদয়ন গুহের দূরত্ব বেড়ে যায়। কয়েক মাস আগে বিষ্ণু কুমার সরকারকে দিনহাটা 2 নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি থেকে সরিয়ে দিয়ে বামনহাট ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান দীপক কুমার ভট্টাচার্যকে সভাপতি পদে আসীন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে বিষ্ণু কুমার সরকার এবং তার অনুগামীদের সঙ্গে উদয়ন গুহের অনুগামীদের একটা দূরত্বের সৃষ্টি হয়।
এমনকি দলীয় কোন কর্মসূচিতে বিষ্ণু কুমার সরকার এবং তার অনুগামীদের অংশগ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে না। খট্টিমারি হাই স্কুলের মাঠে এদিনের এই জনসভাতেও প্রাক্তন ব্লক সভাপতি বিষ্ণু কুমার সরকারকে দেখা যায়নি। এ ধরনের এক পরিস্থিতিতে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ তৃণমূলের মাথাব্যথার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন দিনহাটার রাজনৈতিক মহল।
এদিনের এই জনসভায় বক্তব্য রাখেন জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক, জেলা তৃণমূল কংগ্রেস চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মন, পার্থপ্রতিম রায়, দিনহাটা ২ নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি দীপক কুমার ভট্টাচার্য। সভায় উপস্থিত ছিলেন দলের দুই ব্লক সহ-সভাপতি আব্দুল সাত্তার, দিনহাটা পৌরসভার চেয়ারম্যান গৌরীশংকর মাহেশ্বরী, তৃণমূল নেতা বিশু ধর থেকে শুরু করে অনেকেই।