নিজস্ব সংবাদদাতা,বীরভূম,১১ ই আগস্ট :কবির স্মৃতি বিজরিত “শ্যামলী” দর্শন পাবে আমজনতা, সংস্কারের গেঁড়োয় আবদ্ধ থেকে বের হতে চলেছে এই শ্যামলী গৃহ। আরকিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ঘেরাপোটে দীর্ঘ ৬ বছর ধরে পলিথিন বন্দি শ্যামলী সংস্কারের পর লোকার্পণ করবেন ভারতের উপরাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডু।
বিশ্বভারতীতে এক সময় পড়ুয়া ও শিক্ষকের সংখ্যা বাড়লে নির্জনপ্রায় আশ্রম ছাত্রদের কলকাকলিতে ভরে ওঠে কলরবে। তখন কবি নিজের বাসস্থান নির্মানের জন্য বেছে নিয়েছিলেন আশ্রমসীমার বাইরে মন্দিরের উত্তর দিকের খোলা মাঠকে। কবি যাকে উল্লেখ করেছিলেন ‘রবি’র উত্তারায়ণ’। তবে উত্তরায়ন বলে কোনো বাড়ি নেই, রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজরিত পাঁচটি ঐতিহ্যবাহী গৃহ -‘উদয়ন’, ‘শ্যামলী’, ‘কোনার্ক’, ‘পুনশ্চ’ ও ‘উদীচি’।আরও কিছু কবির স্মৃতি বিজড়িত স্থান নিয়ে চারিদিক ঘেরা এলাকাটিই এখন পরিচিত ‘উত্তরায়ণ’ নামে। যা বিশ্বের প্রতিটি শান্তিনিকেতন প্রেমী মানুষের কাছে মূল আকর্ষণ।
কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে কবিগুরুর স্মৃতি বিজরিত শ্যামলী গৃহের রূপ হয়ে পড়েছিল। এই গৃহের সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয় ভারত সরকারের পুরাতত্ব বিভাগ আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়াকে। কিন্ত ‘শ্যামলী’ নিয়ে বিশ্বভারতী তিক্ত অভিজ্ঞতা, গত ছয় বছরে বহুবার দরবার করে এই কাজ অবশেষে শেষ হয়েছে।
আগামী ১৬ই আগস্ট উপরাষ্ট্রপতি হিসাবে প্রথম শান্তিনিকেতন সফরে আসছেন ভেঙ্কাইয়া নাইডু। ঐদিন শান্তিনিকেতন সফরে এসে বিশ্বভারতী উত্তরায়ন চত্ত্বরে ঐতিহ্যবাহী শ্যামলী গৃহ সংস্কারের পর আমজনতার জন্য লোকার্পণ করবেন তিনি।
শান্তিনিকেতনের কুমিরডাঙা মাঠে হেলিকপ্টারে নামবেন তিনি। তারপর প্রথমে উদয়ন গৃহে কবি কক্ষে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করে শ্যামলী গৃহ সংস্কারের পর আমজনতার জন্য খুলে দেবেন। শেষে উপরাষ্ট্রপতি যাবেন লিপিকা সভা গৃহে। সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপরাষ্ট্রপতি, রবীন্দ্র ভবন অধ্যক্ষ অমল পাল, উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ভাষন দেবেন। পরে রওনা হয়ে যাবেন কলকাতার উদ্দেশ্য।
শ্যামলী গৃহ, রবীন্দ্রনাথ নিজে থেকেই সুরেন্দ্রনাথ আর নন্দলাল দুজনকে ডেকে একটা মাটির বাড়ি নির্মান করার ফরমাশ করে বলেছিলেন, “এবারের যে বাড়ি হবে তাতে মেঝে থাকবে সব সমান, ঘরে চৌকাঠ বলেও কিছু থাকবে না, সিঁড়িও নয়, পথ আর ঘরের তফাতই বোঝা যাবে না – পথ যেন আপনি এসে ঘরে ঢোকে!”
কবির ইচ্ছা অনুযায়ী, উত্তরায়ণ প্রাঙ্গণের উত্তর পশ্চিম কোণে তৈরি হয় মাটির বাড়ি। কবি নাম রাখলেন শ্যামলী। স্থপতি সুরেন করের নকশায় ভুবনডাঙ্গার গৌর মণ্ডলের অধীনে সাঁওতাল কারিগররা এটি তৈরী করেন। নন্দলাল বসু, রামকিঙ্কর প্রমুখ বাড়িটিকে অলংকৃত করেন। কবি এই বাড়িতে গৃহপ্রবেশ করেন ১৩৪২ (১৯৩৫) সালের ২৫ শে বৈশাখ তাঁর ৭৪ তম জন্মদিনে।
১৯৪০ সালে গান্ধীজি ও তাঁর পত্নী এই বাড়িতে বাস করেন। ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত শ্যামলী কাব্যগ্রন্থ এই বাড়িটির নাম অমর করে রেখেছে।