পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী গ্রেফতার ইস্যুতে বিতর্ক, কেন্দ্রীয় নির্দেশ কার্যকরের অভিযোগ

পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী গ্রেফতার ইস্যুতে বিতর্ক, কেন্দ্রীয় নির্দেশ কার্যকরের অভিযোগ

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram

রাজ্য – পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের গ্রেফতারের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। কখনও একদিনে ১২ জন, কখনও সপ্তাহে ৪০ জন কিংবা মাসে শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। এই ধরপাকড়ের পেছনে রাজনৈতিক বোঝাপড়া রয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মানবাধিকার কর্মী রঞ্জিত শূর। তাঁর মতে, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি সরকার নেই, তবুও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশ অনুসরণ করেই কি রাজ্য সরকার এত বড় মাপের অভিযান চালাচ্ছে?

বুধবার মাঝরাতে এক ফেসবুক পোস্টে রঞ্জিত লেখেন, “গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ১২ জন বাংলাদেশি গ্রেফতার হয়েছে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও বাংলাদেশি ধরা পড়ছে। এমনকি ১৫-২০ বছর ধরে এদেশে বসবাস করা ব্যক্তিদেরও বাংলাদেশি বলে গ্রেফতার করা হচ্ছে। হঠাৎ এত ব্যাপক অভিযান কেন চলছে?” তাঁর অভিযোগ, ১৮ মে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দপ্তর থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সার্কুলার জারি হয়েছে, যেখানে রাজ্যগুলিকে অনুপ্রবেশকারী ও রোহিঙ্গাদের শনাক্ত করতে বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো এবং এক মাসের মধ্যে পরিচয় নিশ্চিত করার পাশাপাশি অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের পুশব্যাকের কথাও বলা হয়েছে। রঞ্জিত শূরের মতে, এই নির্দেশিকা জারি হওয়ার পর থেকেই বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে তৎপরতা বেড়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি সরকার না থাকা সত্ত্বেও একই তৎপরতা কেন চলছে, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই জানিয়েছিলেন, তাঁর সরকার কেন্দ্রীয় নির্দেশ মানবে না এবং তা চ্যালেঞ্জ করবে। কিন্তু রঞ্জিত শূরের অভিযোগ, “চ্যালেঞ্জ ট্যালেঞ্জ কিছুই দেখা গেল না। বিষয়টি যেন সকলেই ভুলে গেছে।” তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কেন তৃণমূল কংগ্রেস বা বাম দলগুলি এই নির্দেশিকার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছে না। আদালত, মানবাধিকার কমিশন কিংবা অভিবাসী ইস্যুতে সরব রাজনৈতিক দলগুলিও এই বিষয়ে নীরব বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

কলকাতা হাইকোর্টও সম্প্রতি অনুপ্রবেশকারী ও পরিযায়ী শ্রমিকদের ধরপাকড় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এক বিচারপতি জানতে চেয়েছেন, “সব রাজ্যে হঠাৎ করে পরিযায়ীদের উপর নির্যাতন কেন বাড়ছে?” কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, মামলার শুনানিতে কেন্দ্রীয় সার্কুলারের প্রসঙ্গ কেউই তোলে না। এমনকি মামলাকারীর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

রঞ্জিত শূরের মতে, রাজ্য সরকারের উচিত বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা। কতজনকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা কারা, কখন এবং কীভাবে এদেশে এসেছে, তাদের কাছে কী ধরনের পরিচয়পত্র বা নথি ছিল—এই সব বিষয় স্পষ্ট করা হলে পরিস্থিতি স্বচ্ছ হবে। অন্যথায় সন্দেহ আরও ঘনীভূত হবে।

মানবাধিকার কর্মীর অভিযোগ, এত সংখ্যক গ্রেফতারের পেছনে রাজনৈতিক বোঝাপড়া কাজ করছে। “এটা কি কেন্দ্রের সঙ্গে কোনও বোঝাপড়া? চাপের ফলে রাজ্য সরকার এই নির্দেশ কার্যকর করছে? কারণ এত বাংলাদেশি ধরা পড়া নিছক কাকতালীয় মনে হচ্ছে না,” বলেন তিনি। রঞ্জিত আরও প্রশ্ন তোলেন, “একসময় অনুব্রত মণ্ডলের মতো নেতারা প্রকাশ্যে বলতেন, ভোট করাতে বাংলাদেশ থেকে মানুষ আনা হয়। সেই মানুষগুলো কি আজ হঠাৎ করে অনুপ্রবেশকারী হয়ে গেলেন?”

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “যদি ১৫-২০ বছর ধরে এদেশে বসবাস করা কোনও মানুষকে, যার পরিবার, চাকরি, সন্তান সবকিছু এখানে গড়ে উঠেছে, তাকেও বাংলাদেশি বলে গ্রেফতার করা হয়, তবে সেটা শুধু আইনি নয়, মানবিক দিক থেকেও প্রশ্নবিদ্ধ।”

এই পরিস্থিতি ঘিরে বড় প্রশ্ন উঠছে, পশ্চিমবঙ্গে কি কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের অভিপ্রায় কার্যকর হচ্ছে? রাজ্য সরকারের চুপিসারে পদক্ষেপ এবং কেন্দ্রীয় নির্দেশ মানার মতো পরিস্থিতি নিয়ে তৈরি হয়েছে দ্বৈততা। মানবাধিকার কর্মীর মতে, এটা শুধু আইন প্রয়োগের প্রশ্ন নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রাজনীতি, প্রশাসনিক চাপ এবং নাগরিক অধিকারের গভীর সংকট। রাজ্য প্রশাসনের তরফে স্পষ্ট ব্যাখ্যা না আসা পর্যন্ত এই বিতর্ক থামার নয়, বরং আরও জোরদার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top