পাহাড়ের বৃষ্টির জেরে ডুয়ার্সের নদীতে জলস্ফীতি, জলমগ্ন গয়েরকাটা। কথায় আছে ‘নদীর পাড়ে বাস, চিন্তা বারোমাস’। ঠিক যেনো অক্ষরে অক্ষরে মিলছে কথা। ভোর রাতে ঘুম ভেঙে খাট থেকে ঘরের মেঝেতে পা দিতেই যেন পুকুরের সন্ধান পেলেন বানারহাটের সাঁকোয়াঝোড়া-১নং গ্রাম পঞ্চায়েতের জ্যোতির্ময় কলোনির বাসিন্দা সন্তোষ ঠাকুর।
বিদ্যুতের সুইচ টিপে আলো জ্বালতেই মুহূর্তের মধ্যে জলে ভরে গেলো শোবার ঘর থেকে শুরু করে উঠোন, রাস্তা ঘাট, গোটা গ্রামটাই যেনো হয়ে উঠলো নদী! না কোনো বাঁধ ভাঙা একনাগাড়ে মুষলধারে বৃষ্টি নয়, অথচ ভয়ংকর সেই জলস্রোত। কেউ কেউ বলছেন ভুটান পাহাড় ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে সেই জল নেমে এসেছে সমতলে। এ যেন এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা।
উল্লেখ্য সোমবার রাত থেকে ভুটান পাহাড়ে টানা বৃষ্টিতে ফুলে ফেঁপে ওঠে ডুয়ার্সের নদীগুলি, জলস্ফীতি ঘটে। ডুডুয়া, জলঢাকা, আংরাভাষা নদীতে এই জলস্ফীতির জেরে ক্ষতির সম্মুখীন হয় নদী পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষ। আংরাভাষা নদীর জল বেড়ে ঢুকে পড়ে গ্রামে। বানারহাট ব্লকের গয়েরকাটা জ্যোতির্ময় কলোনি, কোঙ্গারনগর কলোনি, বিবেকানন্দ পল্লী জলমগ্ন হয়ে পড়ে নদীর জল ঢুকে। প্রায় এক কোমর জল পেরিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে এলাকার বাসিন্দাদের। শোয়ার ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়েছে জল, যার ফলে দিশেহারা গ্রামবাসীরা। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে অন্যত্র সরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই।
আরও পড়ুন – ট্যাবলেটে দুর্গা মুর্তি বানিয়ে জাতীয়স্তরে পুরস্কৃত হল বীরভূমের প্রসেনজিৎ
সোমবার রাতের পর মঙ্গলবার সকাল থেকে আকাশে কালো মেঘ থাকায় দুশ্চিন্তা দানা বাধছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। জলপাইগুড়ি ধূপগুড়ি সহ ডুয়ার্সে বৃষ্টি কিছুটা কমলেও ভুটান পাহাড়ে বৃষ্টি চলায় আশঙ্কা রয়েই গেছে। যার কারণে জল বাড়ছে উত্তরবঙ্গের সমস্ত নদী গুলিতে। গতকাল গভীর রাত থেকে জল ঢুকতে শুরু করে বিভিন্ন গ্রামে। আংরাভাষা নদী ঘেঁষা বাড়িগুলি বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে গতকালের রাতের বৃষ্টির পরিমাণ খুব একটা বেশি ছিল না, তাদের অনুমান ভুটান পাহাড়ে অতিরিক্ত পরিমাণে বৃষ্টি হওয়ায় সেই বৃষ্টির জল হাতি নালা হয়ে আংরাভাষা নদীতে এসে পড়েছে, যার ফলে গোটা গ্রামে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আংরাভাষা নদীতে খুব দ্রুত বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এদিন তৃনমূলের গ্রাম পঞ্চায়েতের এসসি, এসটি, ওবিসি সেলের অঞ্চল সভাপতি সমর সরকার জানান, আংরাভাসা নদীর জলোচ্ছ্বাস এর কারনে এলাকার মানুষকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আমরা দলের পক্ষ থেকে সকাল থেকেই মানুষের পাশে দাড়াবার চেষ্টা করছি।
সেচ দপ্তরকে বাধ নির্মানের ব্যাপারে আগেও কয়েকবার জানিয়েছি, ফের এব্যাপারে জানাবো। যদিও মঙ্গলবার সকাল থেকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে রয়েছেন বানারহাট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সীমা চৌধুরী। তিনি এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলেছেন এবং তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। আগামী এক বছরের মধ্যে ওই এলাকায় নদীবাধ নির্মাণ করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। তবে ফের একবার ভুটান পাহাড়ে যদি মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয় তবে পরিস্থিতি অনেকটা ভয়ানক হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।