পুজো বা উৎসব অনুষ্ঠান, শেষ পাতে চাই বেলডাঙ্গার ‘মনোহরা। পুজোর কয়েকটা দিন কবজি ডুবিয়ে খাওয়া-দাওয়া বাঙালির চিরাচরিত প্রথা। ওই দিনগুলি পঞ্চব্যঞ্জনের পাশাপাশি শেষ পাতে রকমারি মিষ্টি চাই-ই চাই। তবে সেই তালিকায় যদি বেলডাঙ্গার মনোহরা থাকে তাহলে তো কথাই নেই। নাম শ্রবণে জিভে জল আনা বেলডাঙ্গার মনোহরার সুনাম জেলার গন্ডি ছাড়িয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের পাশাপাশি দেশে-বিদেশেও রয়েছে। সুঘ্রাণ, সুস্বাদু মনোহরা মুখে ফেলতেই পলকেই গলে গিয়ে এক বিরল অনুভূতির সৃষ্টি করে। তাই মন হরণ করে নেওয়া এই মিষ্টির স্বাদ পেতে মিষ্টি রসিকরা সুযোগ পেলেই বেলডাঙ্গায় চলে আসেন।
বেলডাঙ্গার মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের দাবি, শতাধিক বছর আগে বেলডাঙ্গায় নাকু সাহা নামে এক মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি নিজেও একজন দক্ষ কারিগর ছিলেন। তিনিই বিখ্যাত মনোহরার সৃষ্টি কর্তা। পরবর্তীতে বহরমপুর, কান্দি সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা মনোহরা তৈর করলেও বেলডাঙ্গার মনোহরার কথাই আলাদা। উৎকৃষ্ট মানের মনোহরা তৈরির জন্য উপাদানগুলি হল নির্ভেজাল ছানা, মোয়া বা চাচি, চিনি, কাজু, পেস্তা, লবঙ্গ এবং বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি মশলা। প্রথমে ছানা ও চিনির মিশ্রণ তৈরি করতে হয়। তারপর চাচি বা মোয়াকে ভালোভাবে ভেজে গুড়ো করতে হয়।
আরও পড়ুন – মহালয়ায় তর্পণে ভিড় ফরাক্কার গান্ধি ঘাটে
এরপর ছানা-চিনির মিশ্রণ, মোয়ার গুড়ো, মশলা, কাজু, পেস্তা ভালোভাবে মিশিয়ে বিভিন্ন আকারের মন্ড তৈরি করতে হয়। ওই মন্ডগুলি চিনির গাঢ় রসে ডুবিয়ে (স্থানীয় ভাষায় চিনির চাটনি) কলার পাতার উপর রাখা হয়। বাতাসের সংস্পর্শে মন্ডের উপর মোমের মত চিনির পাতলা প্রলেপ পড়ে। অবশেষে আরও সুস্বাদু ও সুঘ্রাণের পাশাপাশি সৌন্দর্যের জন্য মন্ডের উপর কাজু ও পেস্তার গুড়ো ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
বেলডাঙ্গার ছাপাখানা মোড়ের বিখ্যাত মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সুকান্ত বিশ্বাস বলেন, বেলডাঙ্গার মনোহরার কদর সারা বছর রয়েছে। তবে পুজোর মরসুম সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে চাহিদা বেড়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের আত্মীয়রা বেলডাঙ্গায় ঘুরতে এলে বাড়ি যাওয়ার সময় মনোহরা নিয়ে যান। বেলডাঙ্গার কেউ কোথাও আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেলে উপহার হিসেবে মনোহরা নিয়ে যান।