পূর্ণিয়ায় ডাইনি অপবাদে ৫ জনকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা, কুসংস্কারে উত্তপ্ত আদিবাসী গ্রাম

পূর্ণিয়ায় ডাইনি অপবাদে ৫ জনকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা, কুসংস্কারে উত্তপ্ত আদিবাসী গ্রাম

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram



বিহার – বিহারের পূর্ণিয়ায় এক হৃদয়বিদারক ঘটনায় ফের সামনে এল কুসংস্কারের নির্মম পরিণতি। ডাইনি অপবাদে এক পরিবারের পাঁচ সদস্যকে মারধর করে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহতরা হলেন বাবুলাল ওরাওঁ, সীতা দেবী, মনজিত ওরাওঁ, রানিয়া দেবী এবং তাপতে মোসমাট। এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে তুকতাক, ঝাঁড়ফুঁক এবং ‘কালো জাদু’ নিয়ে ছড়ানো গুজব। সাম্প্রতিক কয়েকটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য গ্রামবাসীরা আক্রান্ত পরিবারকে দায়ী করে এই নৃশংস হামলা চালায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিবারটির এক শিশু কোনোমতে বেঁচে যায় এবং পুলিশকে জানায় যে গ্রামের বেশ কয়েকজন এই হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। শিশুটি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে, যার ফলে পুলিশ এখনও এফআইআর নথিভুক্ত করতে পারেনি বলে জানানো হয়েছে। ঘটনার পর সোমবার গ্রাম প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে এবং প্রশাসন কড়া টহলদারি শুরু করেছে।

তদন্তে উঠে এসেছে, গ্রামের এক বাসিন্দা রামদেব ওরাওঁ অসুস্থ হলে তার পরিবার চিকিৎসার বদলে ঝাঁড়ফুঁকের ওপর নির্ভর করে। কয়েকদিন পর তার মৃত্যু হয়। সেইসঙ্গে একই পরিবারের এক শিশুও অসুস্থ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই গ্রামে ‘কালো জাদু’ নিয়ে আতঙ্ক ছড়ায় এবং মৃতদের পরিবারের ওপর সন্দেহ ঘনিয়ে আসে। এই সন্দেহই শেষ পর্যন্ত পরিণত হয় গণপিটুনি ও গণহত্যায়। ইতিমধ্যেই নকুল কুমার নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

পূর্ণিয়ার পুলিশ আধিকারিক সুইটি সেহরাওয়াত জানিয়েছেন, এই আদিবাসী প্রধান গ্রামে ঝাঁড়ফুঁক এবং কুসংস্কারের প্রভাব অত্যন্ত গভীর। নিহতদের দেহ উদ্ধার হয়েছে একটি স্থানীয় পুকুর থেকে, তবে পিটিয়ে মারার পর দেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে, নাকি জীবন্ত জ্বালিয়ে মারা হয়েছে—তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এই ঘটনার জেরে রাজনৈতিক মহলেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিহারের বিরোধী দলনেতা এবং আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, “বক্সারে তিনজন, ভোজপুরে তিনজন, সিওয়ানে হত্যা হয়েছে, দুষ্কৃতীরা সজাগ কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ঘুমাচ্ছেন।” এই মন্তব্য রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে গভীর উদ্বেগের বার্তা দিচ্ছে।

পূর্ণিয়ার এই ঘটনা প্রমাণ করে, আধুনিকতার যুগেও ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কুসংস্কার কীভাবে মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে, আর প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা কীভাবে সেই সহিংসতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top