পেট্রল ও রান্না করার গ্যাসের জন্য কলম্বোতে শত শত মানুষের লাইন। শ্রীলঙ্কার সংকট যেনো কাটছেই না। নজিরবিহীন এ অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে তীব্র খাদ্য ঘাটতির মধ্যে পেট্রল ও রান্না করার গ্যাসের জন্য কলম্বোতে শত শত মানুষকে জড়ো হতে দেখা গেছে। শনিবার বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানায়। খবরে বলা হয়, নয় লাখ মানুষের শহর কলম্বোর অনেক স্থানেই এ চিত্র দেখা গেছে। লোকজন জ্বালানি মজুত রাখার জন্য এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। চরম জ্বালানি সংকটের প্রেক্ষাপটে শ্রীলঙ্কার সরকার বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফুরিয়ে যাওয়ার পর আমদানি কমে যাওয়ায় তীব্র এ সংকট দেখা দেয়। পাঁচ সদস্যের পরিবারের জন্য রান্নার গ্যাস সংগ্রহ করতে তৃতীয় দিনের মতো লাইনে দাঁড়ানো খণ্ডকালীন গাড়িচালক মোহাম্মদ শাজলি বলেন, ‘৫০০-এর মতো মানুষ থাকলেও কেবল ২০০-এর মতো সিলিন্ডার বিতরণ করা হয়েছে।’ তার পাশে খালি সিলিন্ডার নিয়ে লাইনে দাঁড়ানো ছিলেন আরও কয়েকশ’ জন।
রান্নার গ্যাস বিতরণ কেন্দ্রে যখনই একটি ট্রাক নতুন সরবরাহ নিয়ে পৌঁছাচ্ছে, তখনই স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে থাকা সেনাদেরকে ওই ট্রাককে পাহারা দিতে এবং লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজনকে হাততালি দিতে দেখা যাচ্ছে। শাজলি বলেন, ‘গ্যাস ছাড়া, কেরোসিন তেল ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারছি না।’ তিনি বলেন, ‘(আমাদের জন্য) শেষ বিকল্প কী? খাবার ছাড়াতো আমরা মারা যাবো। এটাই ঘটবে, আমি শতভাগ নিশ্চিত।’ পর্যটননির্ভর শ্রীলঙ্কাকে নিজেদের প্রভাববলয়ে রাখতে চায় ভারত ও চীন উভয় দেশই।
সেই শ্রীলঙ্কাই এখন বিদেশি মুদ্রা, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকটে ভুগছে। দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থায় খারাপ। গণপরিবহন প্রায় নেই; রাস্তায় অন্য গাড়িও খুব একটা দেখা যায় না। কারণ, পেট্রলের অভাবে বেশিরভাগ গাড়ি চলছে না, মানুষও ঘরের ভেতরেই থাকছেন। এমন যখন পরিস্থিতি তখন দ্বীপ দেশটির প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে সতর্ক করেছেন যে, দেশটিতে খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে। দুই কোটি ২০ লাখ জনগণের খাদ্য চাহিদা মেটাতে ও উৎপাদন বাড়াতে তিনি পরবর্তী রোপণ মৌসুমের জন্য পর্যাপ্ত সার কেনারও আশ্বাস দিয়েছেন। গত বছরের এপ্রিলে দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের রাসায়নিক সার নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেন। এতে শ্রীলঙ্কায় ফসলের উৎপাদন অনেকখানি কমে যায়।
সরকার পরে ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও দেশটি এখন পর্যন্ত উল্লেখ করার মতো সার আমদানি করেনি। বৃহস্পতিবার টুইটারে রনিল বলেন, ‘এবারের ইয়ালা (মে থেকে অগাস্ট) মৌসুমের জন্য সার নাও পাওয়া যেতে পারে, তবে মহা (সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ) মৌসুমের জন্য যেন পর্যাপ্ত সার থাকে, সেজন্য পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। আমি সবাইকে এখনকার পরিস্থিতির গুরুত্ব মেনে নিতে অনুরোধ করছি।’ এ প্রেক্ষাপটে জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক থাকা জাপান ওষুধ ও খাদ্যের জন্য দেশটিকে ৩০ লাখ ডলার জরুরি অনুদান দেবে। শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপরিচালিত লিট্রো গ্যাস-এর চেয়ারম্যান ভিজিথা হেরাথ জানান, তারা শনিবার থেকে প্রতিদিন ৮০ হাজার সিলিন্ডার বিতরণের আশা করলেও বাজারে ৩৫ লাখ সিলিন্ডারের ঘাটতি মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ভারতের কাছ থেকে নেয়া ১০০ কোটি ডলার ঋণের আওতায় ১২ কোটি ডলার মূল্যের রান্নার গ্যাস সংগ্রহে দরপত্রও আহ্বান করে সরকার। তবে এতকিছুর পরও দেশটিতে খাবার ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পাশাপাশি রান্নার গ্যাসের দামও হু হু করে বাড়ছে। দেশটিতে সাড়ে ১২ কেজি রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম গত এপ্রিলেও ছিল দুই হাজার ৬৭৫ রুপি; এখন তা বাড়তে বাড়তে ৫ হাজার রুপি ছুঁইছুঁই। স্থানীয় ব্যাংকগুলোর বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে মুদ্রাস্ফিতি বেড়ে ৪০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। চলতি বছরের এপ্রিলে মুদ্রাস্ফিতি ছিলে ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ। এতে খাবারের মূল্য বাড়ে ৪৬ দশমিক ৬ শতাংশ।