মুম্বই – দীর্ঘদিন স্থগিত থাকার পর অবশেষে ফের শুরু হতে চলেছে ২৬/১১ মুম্বই জঙ্গি হামলার অভিযুক্ত জাবিউদ্দিন আনসারি ওরফে আবু জুন্দালের মামলার বিচারপর্ব। সোমবার বম্বে হাইকোর্ট এক নিম্ন আদালতের নির্দেশ বাতিল করে কেন্দ্রের আবেদন মঞ্জুর করেছে। ওই নিম্ন আদালত আগে তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে জুন্দালের হাতে কিছু গোপন নথি তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। বিচারপতি আর. এন. লাড্ডার বেঞ্চ জানায়, নিম্ন আদালতের সেই সিদ্ধান্ত “আইনবিরুদ্ধ”, ফলে জুন্দালের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া ফের শুরু করা যাবে।
২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর, মুম্বই শহর জুড়ে ঘটে গিয়েছিল ভয়াবহ জঙ্গি হামলা। লস্কর-ই-তইবার দশ জঙ্গি একযোগে তাণ্ডব চালায় শহরের বিভিন্ন স্থানে—তাজ হোটেল, ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস, লিওপোল্ড ক্যাফে, নরিমন পয়েন্ট প্রভৃতি জায়গায়। মৃত্যু হয় ১৬৬ জনের, যাঁদের মধ্যে ছিলেন বিদেশিরাও। তদন্তে উঠে আসে, পাকিস্তানের করাচি থেকে বসেই আবু জুন্দাল জঙ্গিদের দিকনির্দেশ দিচ্ছিলেন। তিনিই জঙ্গিদের হিন্দি শেখান এবং মুম্বইয়ের ভূগোল বোঝান, যাতে তারা স্থানীয়দের মতো আচরণ করতে পারে।
জুন্দাল দাবি জানিয়েছিলেন, তাঁকে সৌদি আরব থেকে বেআইনিভাবে ভারতে আনা হয়েছে। এই অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে ২০১৮ সালে তিনি আদালতের কাছে কয়েকটি নথি চেয়েছিলেন। বিশেষ আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করলেও, দিল্লি পুলিশ, বিদেশ মন্ত্রক এবং অসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রক সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বম্বে হাইকোর্টে যায়। এবার সেই মামলাতেই হাইকোর্ট ট্রায়াল কোর্টের নির্দেশ খারিজ করে কেন্দ্রের আবেদন মঞ্জুর করেছে।
তদন্তে জানা গিয়েছে, লস্কর কমান্ডারদের সঙ্গে জুন্দালের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। এমনকি লস্কর-ই-তইবার প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সইদের সঙ্গেও তাঁর বৈঠক হয়। ২০১২ সালে সৌদি আরবে তাঁর অবস্থান শনাক্ত করার পর ভারতীয় গোয়েন্দারা তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনে। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক রাজ্যে সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কিত মামলা চলছে। ইতিমধ্যেই ২০০৬ সালের ঔরঙ্গাবাদ অস্ত্র মামলায় তাঁকে আজীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এই স্থগিতাদেশের জেরে এতদিন বন্ধ ছিল ২৬/১১ মামলার শুনানি। অবশেষে সোমবার বম্বে হাইকোর্টের নির্দেশে নতুন করে শুরু হতে চলেছে মুম্বই হামলার বিচারপর্ব। এই সিদ্ধান্তে তদন্তকারী সংস্থাগুলির হাতে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে যে অবশেষে ন্যায়বিচার পাবে ২৬/১১-র শহিদদের পরিবার।




















