বরযাত্রীর গাড়ি নিয়েই শিলিগুড়িতে একাধিক ব্যবসায়ীর ঠিকানায় হানা আয়কর বিভাগের। গাড়ির সামনে লেখা বর ও কনের নাম। সঙ্গে রয়েছে সশস্ত্র বাহিনী। বরযাত্রীর গাড়ি নিয়েই শিলিগুড়িতে একাধিক ব্যবসায়ীর ঠিকানায় হানা আয়কর বিভাগের। শহরের নয়া বাজার, এস এফ রোড, সেবক রোড ব্যবসায়ীদের বড় অংকের আয়কর ফাঁকি ও অবৈধ আয়ের ওপর হানাদারী চালায় আয়কর বিভাগ।
শুক্রবার সকালে ছদ্মবেশে বরকনের নামের শুভ পরিণয়ে স্টিকার সাঁটানো ৬-৭টি গাড়ি নিয়ে নয়া বাজার এলাকায় ছদ্মবেশে ঢুকে পড়ে আয়কর বিভাগ। নয়া বাজার শহরের অত্যন্ত ব্যস্ত পাইকারি বাজার।তবে ব্যস্ততম এই বাজারে বেশ কয়েকটি গাড়ি থেকে সশস্ত্র বন্ধুক ধারী কেন্দ্রীয় বাহিনীর নামার খবরে ব্যাবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দোকান বন্ধ করে রাস্তা জড়ো হন তারা।
একাধিক বন্ধুকধারীরা এলাকার যুগল শর্মার পাইকারী ব্যবসায়ীর ঠিকানা ঘেরাও করায় আতঙ্ক চূড়ান্ত আকার নেয়। জানা যায় নয়া বাজারের কারবারী যুগল শর্মার চাল,ডাল,ভোজ্য তেলের গোডাউনেই প্রথম হানা পড়ে আয়কর বিভাগের। আয়কর বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে থাকা সশস্ত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী ঘেরাও করে নেয় বহুতল।
ভিড় জমায়েত হওয়ায় ঘটনাস্থলে পৌছে পুলিশ এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। নয়া বাজারের চাল গোডাউনের মালিক বিল্লি শর্মা বলেন সকাল ৭-৭.৩০নাগাদ এলাকায় ঢুকে পড়ে পরপর বেশ কয়েকটি গাড়ি। আবার ভোর ৪টার সময়তেও একইভাবে এই নির্দিষ্ট স্টিকার লাগানো গাড়িগুলিকে দেখা গিয়েছিল বলে মত স্থানীয়দের। এরপরই শিলিগুড়ির এস এফ রোডের বিল্ডার ও প্রমোটার হরিশ আগরওয়ালের ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে হানা দেয় তিনটি গাড়িতে আয়কর বিভাগের দল।
আয়কর দপ্তর আধিকারিক এর অভিযান চালান শহরের সেবক রোড ও মাটিগাড়ার টাউনশীপে চা পাতা, রাইস মিলের মালিক নারায়ন অগারওয়ালের আবাসনে। সেবক রোডে এক ব্যাবসায়ীর ঠিকানায়ও অভিযান চালানোর বিষয়ে খবর মিলেছে। একদিনে শিলিগুড়ি শহরের একাধিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে আয়কর বিভাগের অভিযানের খবরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়।
আর ও পড়ুন প্রতিবন্ধী পরিবারের উপর মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারের অভিযোগ
জানা গিয়েছে প্রায় পাইকারি ব্যবসায়ী যুগল শর্মা, প্রমোটর নির্মাণ সংস্থার মালিক হরিশ আগরওয়াল, চা বাগান ও চাল মিলের মালিক নারায়ণ অগরওয়াল সহ চার শহরের উঁচু মহলের ব্যাবসায়ীদের এদিন দীর্ঘক্ষণ জেরা করা হয়। সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত নয়াবাজার এলাকা যুগল শর্মাকে লম্বা জেরা চালায় আয়কর দপ্তরের অধিকারিকরা। অভিযানের নামে সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে ব্যাবসায়ীকে ঘেরাও করে চাপ সৃষ্টির করছে আয়কর বিভাগ অভিযোগ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি সঞ্জয় সিংহালের।
তিনি বলেন শিলিগুড়ি শহরে বড় ব্যবসায়ীরা রয়েছেন সে অর্থে তেমন শিল্পপতি নেই।আয়কর কর ফাঁকি থেকে অবৈধ আয়ের তীব্র বিরোধিতা জানায় সংগঠন। তবে হিসেবে কারচুপি, কর ফাঁকির মতো অভিযোগ যাচাইয়ে ব্যাবসায়ীদের ঠিকানায় অভিযান চালাচ্ছেন তারা সে ক্ষেত্রে আমরা সবরকম সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। কিন্তু পুর ভোটের বিপরীত ফল হতেই আয়কর বিভাগ শহরে অভিযানের নামে সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী দিয়ে ব্যবসায়ীদের সম্মানহানি ও চাপ সৃষ্টি করছে। ব্যাবসায়ীরা তো গুরুতর অপরাধী নয়।
যে তাদের সশস্ত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে বাগে আনতে হবে। বন্দুকধারী কেন্দ্রীয় পুলিশের উপস্থিতি ত্রাস সৃষ্টি করছে। এ বিষয়ে মার্চেন্ট এসোসিয়েশন এর প্রাক্তন সম্পাদক গৌরীশংকর গোয়েল বলেন সরকারি আধিকারিকদের এইভাবে ছদ্মবেশে বন্দুকধারীদের নিয়ে ব্যবসায়ীদের হেনস্থা একেবারেই মেনে নেওয়া যায়না। টানা দু’বছর কোভিডের ক্ষতির পর এভাবে কেন্দ্র ব্যবসায়ীদের হেনস্থা করছে।
একইসঙ্গে সরকারি আধিকারিকদের নিজ কর্তব্য করতে হলে ছদ্মবেশ বন্দুকধারীদের নিয়ে হিসেব-নিকেশ বসতে হবে কেন? এদিকে আয়কর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে কর ফাঁকি সংক্রান্ত দুই লক্ষের বেশি বাণিজ্যিক মামলায় প্রায় ১ লক্ষ ১৭ হাজার কোটি টাকার বড় অংক বার্ষিক টার্নওভার উঠেছে। জানা যাচ্ছে শিলিগুড়ি থেকে ভোররাতে ৭-৮টি বেসরকারি গাড়ি তারা ভাড়ায় নেয় আয়কর বিভাগের আধিকারিক পরিচয় ১০জনের একটি দল। এরপরই একাধিক জায়গায় তারা অভিযান চালায়।