দেশ – দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শুক্রবার থেকে কার্যকর হল দেশের বহু আলোচিত চার শ্রমবিধি। নরেন্দ্র মোদী সরকারের নির্দেশে শ্রম মন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছে, এ দিন থেকেই দেশে চালু হচ্ছে নতুন শ্রম কাঠামো। ২০১৯ সালে সংসদে পাশ হয় মজুরি বিধি, আর ২০২০ সালে পেরোয় শিল্প সম্পর্ক, সামাজিক সুরক্ষা এবং পেশাগত সুরক্ষা–স্বাস্থ্য–কর্মপরিবেশ সংক্রান্ত আরও তিনটি বিল। বহু টানাপড়েন শেষে শ্রমবিধির বাস্তব প্রয়োগ শুরু হল এ সপ্তাহেই।
কেন্দ্রের দাবি, স্বাধীনতার পর এটিই দেশের সবচেয়ে বড় শ্রমসংস্কার। বাতিল করা হয়েছে ৪৪টি পুরনো শ্রম আইনের মধ্যে ১৫টি ‘অপ্রাসঙ্গিক’ আইন, আর বাকি ২৯টি আইনকে সংহত করে আনা হয়েছে চারটি নতুন বিধির আওতায়। শ্রম মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে শ্রমক্ষেত্রকে সময়োপযোগী করা, শ্রমিক সুরক্ষা বাড়ানো এবং একই সঙ্গে ব্যবসার পরিবেশকে সহজ করা—এই সংস্কারের মূল লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই সংস্কারকে স্বাধীনতার পর সবচেয়ে প্রগতিশীল পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন। অমিত শাহও বলেছেন, এটি শ্রম আইনের ইতিহাসে এক ‘ঐতিহাসিক মাইলফলক’। কিন্তু এই সংস্কারের বিরোধিতা বাড়ছে শ্রমিক সংগঠনগুলির মধ্যে। অভিযোগ উঠছে—এই সংস্কার শ্রমিক স্বার্থ রক্ষা নয়, বরং শ্রমিক শোষণ বৃদ্ধির পথ তৈরি করবে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ সেই বিধি নিয়ে, যেখানে বলা হয়েছে—৩০০-র কম কর্মী থাকলে কোনও সংস্থা সরকারকে না জানিয়েই শিল্প বন্ধ বা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে পারবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে কর্মক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা বাড়বে, অযৌক্তিক বরখাস্তের আশঙ্কাও তীব্র হবে। পাশাপাশি ‘স্ট্যান্ডিং অর্ডার’ কার্যকর হওয়ার ন্যূনতম কর্মীসংখ্যা ১০০ থেকে বাড়িয়ে ৩০০ করা নিয়েও শ্রমিকপক্ষ ক্ষুব্ধ, কারণ এতে মালিকদের হাতেই বেশি ক্ষমতা সঞ্চিত হবে।
আরও বড় প্রশ্ন—এই শ্রমবিধি কি গোটা দেশে কার্যকর? উত্তর হচ্ছে—না। সংবিধান অনুযায়ী শ্রম বিষয় যুগ্ম তালিকায়, ফলে রাজ্যের অনুমতি ছাড়া নতুন বিধি কার্যকর নয়। এখানেই পশ্চিমবঙ্গ স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে। আইএনটিটিইউসির সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘এটি শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী। তাই পশ্চিমবঙ্গ রুল ফ্রেম করেনি।’ সিটু অভিযোগ করেছে, কেন্দ্র আলোচনা ছাড়াই ‘ফ্যাসিবাদী সিদ্ধান্ত’ চাপিয়ে দিচ্ছে। তবে বিজেপি-ঘনিষ্ঠ ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।
চার শ্রমবিধি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেশজুড়ে শ্রমক্ষেত্রে শুরু হল নতুন অধ্যায়। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেল—এ কি শ্রমিকের জন্য নতুন দিগন্ত, নাকি মালিকদের হাতে আরও ক্ষমতা তুলে দেওয়ার পথ?




















