কলকাতা – বৃহস্পতিবারের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা পরিণত হয়েছিল এক উত্তপ্ত রাজনৈতিক রণাঙ্গনে। বাংলা ভাষা এবং বাঙালির অধিকার রক্ষার ইস্যুকে কেন্দ্র করে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস ও বিরোধী বিজেপি শিবিরের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ এবং পাল্টাপাল্টি স্লোগানে কার্যত থমকে যায় অধিবেশনের স্বাভাবিক কার্যক্রম। ঘটনার সূত্রপাত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের সময়। তিনি মাইক হাতে বক্তব্য শুরু করতেই বিজেপি বিধায়করা স্লোগান দিতে শুরু করেন, ফলে পরিস্থিতি দ্রুত উত্তেজক হয়ে ওঠে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্পিকার একের পর এক পাঁচ বিজেপি বিধায়ক—শঙ্কর ঘোষ, অগ্নিমিত্রা পাল, মিহির গোস্বামী, অশোক দিন্দা এবং বঙ্কিম ঘোষকে সাসপেন্ড করেন। কিন্তু এতে উত্তেজনা কমেনি, বরং আরও তীব্র হয়। বাকি বিজেপি বিধায়করাও দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্যে লাগাতার স্লোগান দিতে থাকেন। উত্তেজিত মুখ্যমন্ত্রী বিরোধীদের কটাক্ষ করে বলেন, “কী ভেবেছেন চিৎকার করে আমাকে থামিয়ে দেবেন? পারবেন না। আপনাদের এই অসভ্যতা গোটা বাংলা দেখছে।”
একই সময়ে, বিধানসভার বাইরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের পাল্টা দিয়ে বলেন, “আমরা প্রমাণ করে দিলাম—এলওপি বাইরে থাকলেও ৬৪ জন বিধায়কই এক একজন বিরোধী দলনেতা। ১৪ বছরে এমন বিরোধিতা মমতা দেখেননি।”
বিধানসভার ভেতরে এবং বাইরে শাসক ও বিরোধীর স্লোগান যেন একে অপরের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছিল। করিডোর জুড়ে গর্জে উঠছিল দুই পক্ষের কণ্ঠ—একদিকে “ওয়ান টু থ্রি ফোর, তৃণমূলের সবাই চোর”, অন্যদিকে “মোদী চোর, গোদি ছোড়”। এই রাজনৈতিক সংঘর্ষের মধ্যে বাংলা ভাষার অধিকারের মূল ইস্যুটি যেন আড়ালে চলে যাচ্ছিল।
অবশেষে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শেষ হওয়ার পর বিজেপি বিধায়করা বিধানসভা কক্ষ থেকে ওয়াকআউট করেন। এরপর শাসক দল বাংলা ভাষার উপর ‘আক্রমণ’-এর প্রতিবাদ জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাশ করে।
এই দিনের ঘটনাপ্রবাহ আবারও স্পষ্ট করল, রাজনীতির মঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু যতই প্রাসঙ্গিক হোক না কেন, ব্যক্তিগত আক্রমণ ও রাজনৈতিক আধিপত্যের দ্বন্দ্ব প্রায়শই মূল আলোচনাকে আড়াল করে দেয়। সাম্প্রতিক অতীতে বিধানসভায় শাসক-বিরোধীর এমন নজিরবিহীন উত্তেজনা খুব কমই দেখেছে রাজ্যবাসী।
