বাজারের পানীয় জলের কাজ আটকে দিলো তৃণমূলী মাতব্বরেরা। গুন্ডা ট্যাক্সের রেশ কাটতে না কাটতেই গয়েরকাটা মাছ বাজারে সৌরবিদ্যুৎ পরিচালিত পরিশ্রুত পানীয় জলের কাজ আটকে দেওয়ার অভিযোগ উঠলো তৃণমূল আশ্রিত স্থানীয় কিছু মাতব্বরদের বিরুদ্ধে। জিনিসপত্র গুটিয়ে আতঙ্কে এলাকা ছাড়লেন কাজ করতে আসা শ্রমিকরা। ঘটনা ক্ষোভে ফুঁসছেন হাট ব্যাবসায়ী থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা। ইতিমধ্যেই গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে এলাকাবাসীর তরফে দ্রুত কাজ শুরু করার জন্যে লিখিত ভাবে আবেদন জানানো হয়েছে।
গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সূত্রপাত মাস দেড়েক আগে। গয়েরকাটা মাছ বাজারে হাট ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের কথা চিন্তা ভাবনা করে সৌর বিদ্যুৎ পরিচালিত পরিশ্রুত পানীয় জলের জন্য পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের অর্থানুকুল্যে আনুমানিক দশ লক্ষ টাকা ব্যায় করে পানীয় জলের ট্যাংক বসানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে টেন্ডার করা হয় স্থানীয় পঞ্চায়েতের তরফে।
টেন্ডারে কাজের বরাত পাওয়া ঠিকাদার সংস্থা কাজ শুরু করলে কিছু লোক বাধা দিয়ে সেই কাজ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে সোমবার সকালে শ্রমিকরা পুনরায় কাজ শুরু করলে কিছু মাতব্বর এসে বাধা দিলে শ্রমিকরা কাজের সামগ্রী গুটিয়ে নিয়ে চলে যায়। পাশাপাশি বরাত পাওয়া ঠিকাদার সংস্থার তরফে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানকে চিঠি করে কাজের স্থান পরিবর্তনের জন্যে আবেদন করেন।
সূত্রের খবর, কাজ করতে চাইলে নাকি আগে মাতব্বরদের সঙ্গে বসে রফা দফা করতে হবে। অভিযোগের তীর তৃণমূল মাতব্বরদের বিরুদ্ধে, ঘটনায় অস্বস্তিতে তৃণমূল কংগ্রেস।
ঘটনায় সরব হয়ে বিরোধী শিবিরে তরফে রাজনৈতিক রং না দেখে উন্নয়নের কাজে বাধা দিকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানানো হয় জেলা প্রশাসনের কাছে। অপরদিকে উন্নয়নের কাজ বন্ধ হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নেমে মাতব্বরদের এলাকা ছাড়া করার হুশিয়ারি দেওয়া হয়। যদিও স্থানীয় তৃণমূলের দাবি উন্নয়নের কেউ বাধা দিলে সে যতবড়ই মাতব্বরই হোক না কেন ছাড় পাবেন না। তৃনমূল কংগ্রেস মা মাটি মানুষের দল।
ঘটনার নিন্দা জানিয়ে গয়েরকাটার সিপিআই (এম) নেতা বিরাজ সরকার বলেন, গোটা রাজ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাঁকোয়াঝোড়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলও কাটমানি ও গুণ্ডাট্যাক্স চাওয়ার দিকে পিছিয়ে নেই। এর আগে সকলেই দেখেছে গয়েরকাটা মধুবনী ব্রিজের কাজের থেকেও তৃণমূল নেতার গুন্ডা ট্যাক্স চাওয়া।
এবারে আবার মাছ বাজারে পানীয় জলের কাজ আটকে দিয়েছে তৃণমূলের কিছু মাতব্বর। আমার মতে কাটমানি চাওয়ার জন্যে সেই কাজ বন্ধ করেছে। প্রধানকে অবিলম্বে ঠিকাদারকে ডেকে কাজ করার ব্যাবস্থা করে দিতে হবে বলে জানান বিরাজ বাবু। পাশাপাশি তিনি আরো বলেন, এলাকার পঞ্চায়েত যদি মনে করেন উন্নয়ন মূলক কাজের জন্যে আমিও ব্যাক্তিগত ভাবে একসঙ্গে পাশে দাড়াবো। তৃণমূলের মাতব্বরেরা কাজ বন্ধ করেছে তাই গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান কোনো রকম পদক্ষেপ নিতে ভয় পাচ্ছেন।
ধূপগুড়ি উত্তর পূর্ব মন্ডল সভাপতি কৌশিক নন্দী বলেন, উন্নয়নের কাজে বাধা দেওয়া মোটেই কাম্য নয়। কারা বাধা দিয়েছে ঠিকাদার পরিষ্কার ভাবে বলতে পারবে। যেহুতু গ্রাম পঞ্চায়েত কতৃপক্ষ চুপ, তাই আমরা মনে করছি এর সাথে তৃণমূল কংগ্রেস যুক্ত। অবিলম্বে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানকে কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে। নাহলে আমরা এলাকাবাসীকে নিয়ে আন্দোলন করতে বাধ্য হবো।
ঘটনা প্রসঙ্গে তৃনমূল কংগ্রেস অঞ্চল সভাপতি সমীর পাল বলেন, উন্নয়নের কাজে বাধা দিলে সে এলাকার যতবড় যেই দলের মাতব্বরই হোক না কেন, আইন আইনের পথে চলবে। তৃণমূল কংগ্রেস কখনো এই ধরনের কাজকে সমর্থন করবে না। আমরা প্রশাসনকে পুরো বিষয়টি জানিয়ে যারা কাজ করতে বাধা দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলবো।
আরও পড়ুন – চা ও ঘুঘনি মুড়ি বিতরণ করে কংগ্রেসের প্রতীকী প্রতিবাদ সামশেরগঞ্জে
গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান বিনোদ ওরাও বলেন, আমরা এজেন্সির মাধ্যমেই প্রথমে জানতে পারি মাছ বাজার এলাকায় সৌরবিদ্যুত পরিচালিত পানীয় জলের কাজ করতে গিয়ে তাদের স্থানীয় কিছু ব্যাক্তির বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সেকারণে ওই এলাকায় কাজ করতে আগ্রহী নন তারা।কাজের স্থান পরিবর্তন করতে চিঠি দিয়ে আমাদের জানিয়েছে। পরবর্তীতে স্থানীয় কিছু লোক আমাদের স্মারকলিপির মাধ্যমে জানায় কাজটা ওখানেই হোক যাতে কোনো ভাবেই বন্ধ না হয়। আমরা প্রশাসনিক ভাবে যারা সরকারি কাজে বাধা দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে বেবস্থা গ্রহণ করা হবে।