হুগলি – হুগলি জেলায় বাল্যবিবাহ রুখতে এক অভিনব এবং কড়া নির্দেশিকা জারি করল জেলা প্রশাসন। এবার থেকে রূপশ্রী প্রকল্পের সুবিধাভোগী যে কোনও কনের বিয়েতে বাধ্যতামূলকভাবে টাঙাতে হবে একটি পোস্টার, যেখানে স্পষ্ট লেখা থাকবে—“এটা বাল্যবিবাহ নয়”। শুধু পোস্টারই নয়, বিয়ের আগে কনেপক্ষকে দিতে হবে একটি লিখিত মুচলেকাও, যাতে তাঁরা নিশ্চিত করবেন যে বিয়ের সময় মেয়ের বয়স ১৮ বছর হয়েছে।
হুগলির অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অমিতেন্দু পাল জানিয়েছেন, বাল্যবিবাহ বন্ধে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যেই এই নতুন পদক্ষেপ। তাঁর মতে, “বিয়েবাড়িতে এমন পোস্টার দেখলে আমন্ত্রিতরা বুঝতে পারবেন বিয়ে আইনসঙ্গত বয়সে হচ্ছে, এবং এর মাধ্যমে তারা নিজেরাও সচেতন হবেন। অন্যদেরও সচেতন করতে পারবেন।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আরামবাগ মহকুমা সহ হুগলির বিভিন্ন অংশে সম্প্রতি একাধিক নাবালিকার বিয়ে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই পরে গোপনে বিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই কারণেই এবার আরও কড়া নজরদারি এবং সরাসরি বিয়েবাড়িতে সচেতনতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
বিশেষ করে রাজ্য সরকারের রূপশ্রী প্রকল্পের আওতায় যারা ২৫ হাজার টাকার অনুদানের জন্য আবেদন করেন, তাদের জন্য এই নিয়ম বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এখন থেকে রূপশ্রী ফর্ম জমা দেওয়ার সময় বিয়ের আমন্ত্রণপত্রের পাশাপাশি দিতে হবে লিখিত মুচলেকা এবং অনুষ্ঠানে পোস্টার টাঙানোর প্রতিশ্রুতি।
জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যেই জেলার সমস্ত বিডিও ও মহকুমা শাসকদের এই নির্দেশ কার্যকর করার জন্য চিঠি পাঠিয়েছে। এছাড়াও কন্যাশ্রী ক্লাব, স্কুল এবং স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে যুক্ত করে গ্রাম ও বিদ্যালয়ে সচেতনতা শিবিরও চালানো হচ্ছে।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা মনে করছেন, নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে হলে মেয়েদের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি হয়। তাই কোনও আপস নয়—বাল্যবিবাহ নির্মূলই তাঁদের চূড়ান্ত লক্ষ্য।
এই অভিনব উদ্যোগ সমাজে কতটা কার্যকর হয়, তা সময় বলবে, তবে প্রশাসনের দাবি অনুযায়ী, প্রতিটি বিয়ের মণ্ডপে এখন বাল্যবিবাহ-বিরোধী বার্তা পৌঁছে দেওয়াই তাঁদের প্রধান লক্ষ্য।
