বাড়ছে শিক্ষক প্রশিক্ষণে বিএসএইইউ-এর মান। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক প্রশিক্ষণের পরিকাঠামো ক্রমেই বিকশিত হচ্ছে। বাড়ছে শিক্ষক প্রশিক্ষণে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। পাঠ্যক্রমের মানোন্নয়নে উদ্যোগী হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বাবা সাহেব অম্বেদকর এডুকেশন ইউনিভার্সিটি অর্থাৎ বিএসএইইউ (পূর্বতন ‘দি ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ টিচার্স ট্রেনিং, এডুকেশন, প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন’
(ডব্লুইউটিটিইপিএ)।
গোটা রাজ্যের ৬২৪টি বিএড কলেজকে পর্যায়ক্রমে নিয়ে আসা হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ বিএসএইইউ-এর তত্বাবধানে। চালু হচ্ছে নতুন নানা পাঠ্যক্রম। এ ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগী ভূমিকা নিয়েছেন উপাচার্য ডঃ সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের যে লাগাতার বিতর্ক চলছে, তার মধ্যেও এবার প্রচুর আগ্রহ দেখা গিয়েছে বিএড এবং এমএড-এ ভর্তির জন্য। প্রতিষ্ঠানের ডেভিড হেয়ার চত্বরে শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিভাগে এই দুই বিভাগে ৫০টি করে আসন। দুটিতেই আসন প্রায় পূর্ণ। ক্লাশও শুরু হয়ে গেছে। ভর্তি প্রক্রিয়া পুরোটাই হয়েছে বিধি মেনে, অনলাইনে। শুরু হয়েছে পিজিডিইপিএ-র ক্লাশও।
অবিভক্ত ভারত বা গোটা উপমহাদেশেই শিক্ষক প্রশিক্ষণে নামডাক ছিল কলকাতার। ১৮৫৬ সালে মাদ্রাজে, ১৮৮১-তে লাহোড়ে, ১৯০১-এ কার্শিয়াংয়ে ১৯০১ সালে শিক্ষক প্রশিক্ষণের স্বল্পমেয়াদি পাঠ্যক্রম করলেও বিজ্ঞানসম্মত পরিকাঠামোয় ১৯০৮ সালে কলকাতায় শুরু হয় এই কার্যক্রম। মূল নিয়ন্ত্রক ছিল ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজ। ক্রমে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং কলেজেও শুরু হয় বিএড এবং এমএড পাঠ্যক্রম। গড়ে ওঠে অনেক বেসরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ গোটা দেশে ইউজিসি এবং ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিটার্স এডুকেশনের তদারকিতে হয় এই পাঠ্যক্রম।
পশ্চিমবঙ্গে এই তত্বাবধানের কাজটা আরও সুচারুভাবে করার জন্য একটি পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির জন্য ২০১৫ সালে বিধানসভায় আইন পাশ করা হয়। ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজ চত্বরে গড়ে উঠেছে নয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এর অধীনে প্রথম ব্যাচ শুরু হয় ২০১৬-‘১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে। একে একে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার বিএড/এমএড শিক্ষাকেন্দ্রগুলোকে বিধি মেনে অন্তর্ভূক্ত করা হয় নয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। সবশেষে ২০২১-’২২এ যুক্ত হয়েছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলো। এখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসেছে মোট ৬২৪টি কলেজ। এর মধ্যে সরকারি ও সরকার-প্রোষিত ২২টি। বাকিগুলো বেসরকারি। ১৯টিতে রয়েছে এডুকেশনে স্নাতকোত্তর এম এড পাঠ্যক্রম। এর মধ্যে তিনটি সরকারি।
২০১৬ থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে এমফিল ও পিএইচডি। বিএড এবং এমএড-এর কার্যক্রম দু’বছর করে। প্রতিটিতে ৪ টি সেমিস্টার। প্রতি সেমিস্টারে ৫০ টি আসন।
শিক্ষায় নিয়োগ নিয়ে এ রাজ্যে অনিশ্চয়তার অভিযোগ উঠলেও প্রশিক্ষণের চাহিদা কিন্তু বেড়ে চলেছে। ২০১৬-’১৮ শিক্ষাবর্ষে যেখানে বিএড কার্যক্রমে শিক্ষার্থী ছিলেন ১৩ হাজার ৯৯৮ জন, সেখানে তার পরের দুই শিক্ষাবর্ষে সংখ্যাটি বেড়ে হয়েছে যথাক্রমে ৩০ হাজার ৭৯৭ এবং ৩৬ হাজার ৭৩৪। ২০১৯-’২১ এবং ২০২১-’২৩ শিক্ষাবর্ষে ওই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে যথাক্রমে ৩৪ হাজার ০৫৮ এবং ৫৫ হাজার ৩৯৮। বর্তমানে এমএড করছেন ৮৭৮ জন।
অতিমারির প্রায় আড়াই বছরে স্বাভাবিক কাজকর্ম যখন বিপর্যস্ত, তার মধ্যেই কাজ এগিয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে পূর্বতন ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজ চত্বরের খোলা অংশে তৈরি হয়েছে ছ’তলা ভবন। চালু হয়েছে নয়া পাঠ্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক জানান, বিএড ও এমএড-এর পাশাপাশি স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন, প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন (পিজিডিইপিএ) পাঠ্যক্রম শুরু হয় ২০২০-র ডিসেম্বর থেকে। স্নাতকোত্তরে ৫০ শতাংশ থাকলে এতে আবেদন করা গিয়েছে। গত শিক্ষাবর্ষে অতিমারির মধ্যেও এবং এবছর এই পিজিডিইপিএ প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার আগ্রহ উৎসাহব্যঞ্জক। এবারের ভর্তিপ্রক্রিয়া এখনও চলছে। তিনটে ব্যাচের মধ্যে প্রথম ব্যাচের পড়ুয়ারা পাঠ্যক্রম শেষ করেছেন।চাহিদা বাড়ায় আসনসংখ্যা ২০ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩০।
রাজ্যে পড়ুয়ার সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন ধরণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। আইন মেনে, স্বচ্ছতার সঙ্গে এগুলো পরিচালনা বা নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক কিছু জানার প্রয়োজন হচ্ছে। পেশাদারি ব্যবস্থাপনার খুঁটিনাটি বুঝতে এই পাঠ্যক্রমের একটি বিশেষ উপযোগিতা রয়েছে। যাঁরা রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার, অধ্যক্ষ, ডিআই, এডিআই, এসআই প্রভৃতি হতে চান, বা নতুন যোগ দিয়েছেন, তাঁরা এই পিজিডিইপিএ প্রোগ্রামে উপকৃত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে।