রাজ্যের চার বিধানসভা কেন্দ্রে চলছে উপ নির্বাচন। রাজ্যের চার কেন্দ্রে বিধানসভা উপ নির্বাচন শুরু হয়েছে এদিন সকাল থেকেই। শান্তিপুর, দিনহাটা, গোসাবা ও খড়দহ কেন্দ্রে চলছে ভোট গ্রহণ। এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ভবানীপুর, জঙ্গিপুর এবং সামশেরগঞ্জে ভোটগ্রহণ হয়েছিলো। যেখানে হ্যাটট্রিক করেছিল তৃণমূল, ফাঁকা হাতে ফিরতে হয়েছিল বিজেপিকে। তবে একুশের বিধানসভা নির্বাচনের ফল অনুযায়ী শান্তিপুর এবং দিনহাটায় এগিয়ে ছিলো বিজেপি। এবারে ওই আসনে নিজেদের জয় ছিনিয়ে আনতে মরিয়া গেরুয়া শিবির।
অন্যদিকে, গোসাবা ও খড়দহে একুশের ভোটে জয়ী হয় তৃণমূল। কিন্তু উপনির্বাচনে চারে চার হওয়ার আশায় তৃণমূল শিবির। এদিকে চার কেন্দ্রে ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে। ১০০ শতাংশ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠ ভোট করাতে বদ্ধপরিকর নির্বাচন কমিশন। প্রতিটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে বুথ পিছু চার জন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জাওয়ান মোতায়েন করা হয়েছে।
দিনহাটায় ২৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী, খড়দহের ২০ কোম্পানি, শান্তিপুরে ২২ কোম্পানি ও গোসাবায় ২৩ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন হয়েছে। এই চার আসনের মধ্যে হাই প্রোফাইল কেন্দ্র খড়দহ। সেখানে তৃণমূলের প্রার্থী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। উল্টোদিকে বিজেপির তরুণ মুখ জয় সাহা।
গত বিধানসভা নির্বাচনে খড়দহে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূলের কাজল সিনহা। কিন্তু করোনায় তাঁর মৃত্যু হয়। তার ফলেই এই আসনে ফের ভোট হচ্ছে। অন্যদিকে, গোসাবায় তৃণমূলের প্রার্থী সুব্রত মণ্ডল, বিজেপির প্রার্থী পলাশ রাহা এবং আরএসপির প্রার্থী অনিল চন্দ্রমন্ডল। এখানে একুশের ভোটে এখানে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূলের জয়ন্ত নস্কর। কিন্তু তাঁরও মৃত্যুর ফলে এই আসনের উপনির্বাচনহচ্ছে।
অন্যদিকে, শান্তিপুরে এবারের তৃণমূল প্রার্থী ব্রজকিশোর গোস্বামী, বিজেপির তরফে দাঁড় করানো হয়েছে নিরঞ্জন বিশ্বাসকে। বামেদের প্রার্থী সৌমেন মাহাতো এবং কংগ্রেস প্রার্থী রাজু পাল। এই আসনে চতুর্মুখী লড়াই হতে চলেছে। একুশের ভোটে বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার এই আসনে জয়লাভ করেন। কিন্তু পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হন তিনি। যাঁর ফলে তাঁকে বিজেপির বিধায়ক পদ ছাড়তে হয়। দিনহাটা একুশের ভোটে মাত্র ৫৭ ভোটে উদয়ন গুহকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপির নিশীথ প্রানাণিক। এবার এই আসনে বিজেপি প্রার্থী করেছে অশোক মন্ডলকে। বামেদের প্রার্থী আব্দুল রউফ ও তৃণমূল উদয়ন গুহকেই ফের এখানে প্রার্থী করা হয়েছে।
এই উপনির্বাচন তৃণমূলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। পশ্চিমবঙ্গে মাত্র ছয় মাস আগেই বিধানসভা নির্বাচনে রীতিমতো আগেই রাজ্যে ঝড় দেখিয়েছে তৃণমূল। জোড়াফুলের পক্ষে সে হাওয়া যে এখনও বজায় রয়েছে তা প্রমাণ করতে হবে এই উপনির্বাচনে। দিনহাটা ও শান্তিপুর আসনে জয় পেলে বুঝিয়ে দেওয়া যাবে রাজবংশী বা মতুয়া ভোটের একচেটিয়া বিজেপির দখলে নয়।
অন্যদিকে, ভোটে ভরাডুবির পরে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি কার্যত ছন্নছাড়া অবস্থা। ফল ঘোষণার পরে ছয় মাস কেটে গেলেও যেন বিপর্যয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি গেরুয়া শিবির। উপনির্বাচনের ফলাফল চারশূন্য করে তৃণমূল জিততে পারলে বিজেপিকে আরও বেশি করে ধাক্কা দেওয়া যাবে। ইতিমধ্যেইপশ্চিমবঙ্গের পাঁচ বিজেপি বিধায়ক তৃণমূলে এসেছেন।
আর ও পড়ুন হাওড়ায় নকল ডিওডোরেন্টের হদিস মিললো
এই উপনির্বাচনে শক্তিবৃদ্ধি করতে পারলে আরও বিজেপি বিধায়ক টানার শক্তিও পাবে শাসক পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল। এদিকে এদিন সকালে ভোট গ্রহণ শুরুর পর থেকেই বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর আসতে শুরু করেছে। দিনহাটার বিজেপি প্রার্থী অশোক মণ্ডলের সঙ্গে তৃণমূল কর্মীদের বচসা হয় বলে অভিযোগ। শাসকদলের বিরুদ্ধে ভোটদানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ বিজেপি প্রার্থীর। বিজেপি প্রার্থী অশোক মণ্ডলের বিরুদ্ধে পাল্টা ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ এনেছে তৃণমূল। অন্যদিকে, খড়দহে বিজেপি প্রার্থী জয় সাহার সঙ্গে বচসার ঘটনা ঘটে। বিজেপি প্রার্থী মাস্ক ছাড়া বুথে ঢুকছেন বলে অভিযোগ ওঠে। কোভিডবিধি অমান্য এখানকার বিজেপি প্রার্থী জয় সাহাকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ ও বচসা চলে।