কলকাতা – প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতর বিধান ভবনে ভাঙচুরের অভিযোগে অবশেষে বিজেপি নেতা রাকেশ সিংকে গ্রেফতার করল কলকাতা পুলিশ। মঙ্গলবার গভীর রাতে ট্যাংরার একটি ফ্ল্যাট থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। দীর্ঘ পাঁচদিন ধরে তাঁকে খুঁজে না পাওয়ার পর গোপন সূত্রে খবর পেয়ে রাত ২টা নাগাদ ট্যাংরার ওই ফ্ল্যাটে হানা দেয় পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সপ্তাহে বিহারে রাহুল গান্ধীর ভোটার অধিকার যাত্রা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রয়াত মাকে কুকথা বলার অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাকেশ সিংয়ের নেতৃত্বে বিধান ভবনের সামনে বিক্ষোভ হয়।
অভিযোগ, সেই বিক্ষোভ চলাকালীন প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতরে ভাঙচুর চালানো হয়। রাহুল গান্ধীর ছবিতে কালো কালি লেপে দেওয়া হয়। বিধান ভবনে হামলার অভিযোগে এন্টালি থানায় রাকেশ সিং ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে প্রদেশ কংগ্রেস।ভারতীয় ন্যায়সংহিতার একাধিক ধারায় অভিযোগ দায়ের করে কংগ্রেস। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই তিনজন বিজেপি কর্মী ও রাকেশের এক সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে রাকেশ সিং তখনও পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন।সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক ভিডিওতে দেখা যায়, পলাতক অবস্থাতেও বিজেপি নেতা রাকেশ সিং বিভিন্ন বার্তা দিচ্ছেন। তিনি লাইভ ভিডিও ও পোস্টের মাধ্যমে পুলিশের বিরুদ্ধে কটাক্ষ করতে থাকেন। এতে পুলিশের তৎপরতা আরও বাড়ে।এরই মধ্যে সোমবার রাকেশের ছেলে শিবম সিংকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগ, পলাতক বাবাকে পালাতে সাহায্য করেছিলেন শিবম। শিবমকে গ্রেফতারের পর থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল, খুব শীঘ্রই রাকেশ সিংও পুলিশের জালে ধরা পড়বেন।
কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছিল। তাঁদের অভিযোগ ছিল, রাজনৈতিক চাপে পুলিশ ইচ্ছে করেই রাকেশকে গ্রেফতার করছে না। সোশ্যাল মিডিয়ায়ও এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
অবশেষে অভিযোগ দায়েরের পাঁচদিন পর ট্যাংরার ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার করা হয় রাকেশ সিংকে। গ্রেফতারের সময় তাঁকে পুলিশের গাড়িতে তোলার মুহূর্তে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নামে জয়ধ্বনি দেন।পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাকেশ সিংকে আজ আদালতে তোলা হবে। সেখানে তদন্তের স্বার্থে পুলিশ হেফাজতের আবেদন জানানো হবে। এদিকে, প্রদেশ কংগ্রেস দাবি করেছে, ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত সকলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।পুলিশ জানিয়েছে, বিধান ভবন ভাঙচুর কাণ্ডে আরও কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। তাঁদেরও খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু হয়েছে।
রাকেশ সিংয়ের গ্রেফতার নিয়ে বিজেপি শিবিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। দলের একাংশের দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই রাকেশকে টার্গেট করা হচ্ছে। তবে অন্য একাংশের মতে, আইনের প্রতি সম্মান রেখে তদন্তে সহযোগিতা করা উচিত ছিল।সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিও ও প্রমাণ সংগ্রহের পর পুলিশের বিশ্বাস, ভাঙচুরের ঘটনায় রাকেশ সিং সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সেই প্রমাণ আদালতে পেশ করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে পুলিশ।এই ঘটনার পর প্রদেশ কংগ্রেস ভবনের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। বিধান ভবনের আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে যাতে নতুন করে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়।পুলিশ জানিয়েছে, রাকেশ সিংকে নিয়ে আরও বিস্তৃত জেরা করা হবে। তাঁর কাছ থেকে প্রমাণ সংগ্রহ ও অন্যান্য অভিযুক্তদের নাম জানা পুলিশের অন্যতম লক্ষ্য। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই মামলার তদন্তে বড় অগ্রগতি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
