রাজ্যে জারি হচ্ছে করোনা বিধি, কাল থেকে বন্ধ স্কুল কলেজ। করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে পশ্চিমবাংলার বুকে। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। এই অবস্থায় ৩ জানুয়ারি থেকে কড়া বিধি-নিষেধ আরোপ করল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী ঘোষণা করেছেন, করোনার সংক্রমণ রুখতে রাজ্যে মেনে চলতে হবে কোভিড বিধি। পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সমস্ত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। শুধুমাত্র ৫০ শতাংশ কর্মচারী নিয়ে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু থাকবে।
রাজ্যের সরকারি সমস্ত অফিসে ৫০ শতাংশ কর্মীর উপস্থিতি থাকবে। সরকারি অফিসের কর্মীদের ওয়ার্ক ফর্ম হোমে জোর দেওয়া হয়েছে। সমস্ত বেসরকারি অফিস এবং প্রতিষ্ঠানগুলি ৫০ শতাংশের বেশি কর্মচারী নিয়ে কাজ করতে পারবে না। বেসরকরি ক্ষেত্রেও বাড়ি থেকে কাজ মানে ওয়ার্ক ফর্ম হোমে গুরুত্ব দিতে হবে। সুইমিং পুল, স্পা, জিম, বিউটি পার্লার, সেলুন আপাতত বন্ধ থাকবে। সমস্ত বিনোদন পার্ক, চিড়িয়াখানা, পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
শপিংমল এবং মার্কেট কমপ্লেক্সে প্রবেশ সীমিত রেখে কাজ করতে হবে। রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে কমপ্লেক্স। কিন্তু কোনও সময়েই ক্যাপাসিটির ৫০ শতাংশের বেশি উপস্থিতি রাখা যাবে না। রেস্তোরাঁ এবং বারগুলি একবারে ক্ষমতার ৫০ শতাংশ নিয়ে চালাতে হবে। রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। সিনেমা হল এবং থিয়েটার হলগুলি মোট আসনের ৫০ শতাংশ হাজিরায় কাজ করতে পারে রাত ১০টা পর্যন্ত। সর্বাধিক ২০০ জনকে নিয়ে সভা এবং সম্মেলন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
কোনও কমিউনিটি হলে সম্মেলন বা সভা সমিতি হলে ৫০ শতাংশের বেশি প্রবেধাধিকার নেই। কোনও সামাজিক, ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একসঙ্গে ৫০ জনের বেশি ব্যক্তিকে অনুমতি দেওয়া হবে না। বিবাহ সম্পর্কিত অনুষ্ঠানের জন্য ৫০ জনের বেশি ব্যক্তিকে অনুমতি দেওয়া হবে না। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া বা শেষকৃত্যের জন্য ২০ জনের বেশি ব্যক্তিকে অনুমতি দেওয়া হবে না। লোকাল ট্রেনগুলি ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে চলবে। ট্রেন চলবে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত। মেট্রো পরিষেবা চালু থাকবে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে।
জন সমাগম, যানবাহন চলাচল এবং যেকোনো ধরনের সমাবেশ নিষিদ্ধ রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত। শুধুমাত্র অত্যাবশ্যকীয় এবং জরুরী পরিষেবার অনুমতি দেওয়া হবে। এছাড়া ২ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দুয়ারে সরকার ক্যাম্পগুলি স্থগিত করা হয়েছে। তা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আবার শুরু হবে। পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে দুয়ারে সরকার ক্যাম্প। তার আগে কোভিড পরিস্থিতি বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রথম দুটি করোনা ঢেউ আছড়ে পড়ার পর মতো, বিভিন্ন চেম্বার অফ কমার্স এবং বাণিজ্য সংস্থা, বিভিন্ন বাজারে নিয়মিত স্যানিটাইজেশন এবং করোনাবিধি মেনে উপযুক্ত স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যবিধি প্রোটোকল মেন চলতে হবে। শারীরিক দূরত্ব কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
মাস্ক ছাড়া বাজারে প্রবেশাধিকার মিলবে না। শিল্প, কলকারখানা, মিল, চা বাগান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কঠোরভাবে করোনা বিধি মানা আবশ্যক। মাস্ক পরে কর্মস্থলে যেতে হবে, নিয়মিত স্যানিটাইজেশন এবং জোড়া টিকা নেওয়া আবশ্যক কর্মীদের। সমস্ত সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে সমস্ত ব্যবস্থা পর্যালোচনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে করোনা চিকিতসার সুযোগ যাতে সময়মতো মেলে এবং সঠিক হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। যাদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন তাদের ফেরানো যাবে না।
আর ও পড়ুন সাবধান, করোনা সংক্রমণের মাঝেই হানা দিয়েছে ‘ফ্লোরিনা’
করোনা পজিটিভ যেসব রোগী উপসর্গহীন তাদের বাড়িতে আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাদের বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে এবং স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন পরিষেবা কমপক্ষে ৫০ শতাংশ, মূলত, করোনা মহামারীর দ্বিতীয় তরঙ্গের সময় যা কার্যকর ছিল সেটাই ফের কার্যকর করা হলো। সমস্ত অফিস ও প্রতিষ্ঠানের নিয়োগকর্তা, ব্যবস্থাপনা সংস্থার মালিক, তত্ত্বাবধায়ক এবং কর্মস্থলের প্রধান করোনা নিরাপত্তা ব্যবস্থা লঙ্ঘনের জন্য দায়ী থাকবেন।
কর্মস্থলের নিয়মিত স্যানিটাইজেশন, কর্মচারীদের টিকা প্রদান-সহ উল্লিখিত নির্দেশাবলী এবং করোনার উপযুক্ত নিয়ম মেনে চলতে হবে। খাবার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের হোম ডেলিভারি স্বাভাবিক থাকবে। করোনা বিধি মানার ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে এবং প্রোটোকল অনুসরণ করে চলতে হবে। মাস্ক পরা, স্বাস্থ্য সচেতন থাকা বাধ্যতমূলক বলা হয়েছে।বিদেশ ফেরত যাত্রীদের র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট বাধ্যতামূলক।