বিপ্লবী দিনেশ গুপ্ত থেকে বাঁকুড়ার ধনঞ্জয় চ‍্যাটার্জীর ‘ফাঁসীর মঞ্চ’ মুক্ত করে দিলেন মুখ‍্যমন্ত্রী

বিপ্লবী দিনেশ গুপ্ত থেকে বাঁকুড়ার ধনঞ্জয় চ‍্যাটার্জীর ‘ফাঁসীর মঞ্চ’ মুক্ত করে দিলেন মুখ‍্যমন্ত্রী

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram

বিপ্লবী দিনেশ গুপ্ত থেকে বাঁকুড়ার ধনঞ্জয় চ‍্যাটার্জীর ‘ফাঁসীর মঞ্চ’ মুক্ত করে দিলেন মুখ‍্যমন্ত্রী। ১৫ আগস্ট ২০০৪। টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছিল। সারারাত আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের দেওয়ালে কান পেতে রেখে সময় যাপন করছি। কখন ফাঁসীর মঞ্চের পাটাতন সরে গিয়ে দেওয়ালে আছড়ে পড়ে টং শব্দ হবে। যখন  ফাঁসীর মঞ্চের পাটাতন টেনে সরিয়ে দেওয়া হয় তখন পাঠাতনের দুই খন্ড দুদিকে সরে গিয়ে ঝুলে পড়ে দেওয়ালে। মধ‍্যখানে ঝুলতে থাকে আসামীর দেহ। তখন এই শব্দ হয়। আলিপুর পুলিশ কোর্টের দিকের দেওয়ালে কান পেতে সেই শব্দ শোনার সময় গুনছিলাম। চারপাশে মিডিয়ার আনাগোনা।

 

মিডিয়ার ‘বসে’রা পযর্ন্ত রাস্তায় নেমে পড়েছেন। আমি তখন হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকায়। আমার ওপর দায়িত্ব ছিল ফাঁসীর পাটাতন পড়তেই অফিসকে ফোন করে জানানো। ‘হ‍্যাঙ্গড’  লিখে কাগজ ছাপার জন‍্য রেডি থাকবে। সেটা করতে পেরেছিলাম। এই কথার কারণ আজ সেই ফাঁসীর মঞ্চ আর কোন মানুষকে ফাঁসীতে ঝোলাতে পারবে না। বরং তা এখন মানুষের দেখার জন‍্য উন্মুক্ত হল। এই জেলে ফাঁসী হয়েছে বহু দেশপ্রেমীর। বিনয় বাদল দীনেশ খ‍্যাত দীনেশ গুপ্তের ফাঁসী হয়েছিল এই জেলে।

 

এছাড়াও কানাইলাল দত্ত, সত‍্যেন্দ্রনাথ বসু, বীরেন্দ্র নাথ দত্তগুপ্ত, গোপীনাথ সাহা, প্রমোদ রঞ্জন চৌধুরী, অনন্ত হরি মিত্র, রামকৃষ্ণ বিশ্বাস, দীনেশ মজুমদারের মত দেশপ্রেমিকগণকে ইংরেজ ফাঁসীতে ঝুলিয়ে খুন করেছিল এই জেলের গারদের অন্তরালে। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, ঋষি অরবিন্দদের এই জেলের অন্ধ কুঠুরিতে বন্দী করে রেখেছিল। জেলে থেকে অনেকেই অসম্ভব নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন।

 

এই জেলে অত‍্যাচারি ইংরেজদের দ্বারা জেলবন্দী ছিলেন যেসব বীর বিপ্লবী তাদের প্রত‍্যেকের নাম, স্মৃতি সযত্নে সংরক্ষণ করে রাখা আছে যা দেখলে মনে হয় এইসব মানুষেরা কষ্ট যন্ত্রণা নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন বলেই আজ আমরা স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হতে পেরেছি। তাদের অসীম ত‍্যাগ ও যন্ত্রণার বিনিময়ে এই স্বাধীনতা লাভ। মুখ‍্যমন্ত্রী ঠিকই বলেছেন, নেতা মানেই মানুষের জন‍্য উৎসর্গীত প্রাণ তা সে রাজনৈতিক দলরই হোন না কেন। প্রত‍্যেকের সম্মান আছে তা রক্ষা করা উচিৎ।

 

তিনি যেভাবে এই মিউজিয়াম সাজিয়েছেন তা দেখলে জনসাধারণের হৃদয় উদ্বেলিত হবে। নিজের দেশের ইতিহাস জেনে সমৃদ্ধ হবেন তারা। সমৃদ্ধ হবে গবেষক ছাত্রছাত্রীরা। সেদিন মানুষ এই দেশপ্রেমীদের জন‍্য অশ্রু ঝরিয়েছিলেন। তাদের স্মৃতি স্মরণের নিমিত্ত মানুষের সামনে এই মিউজিয়াম উন্মুক্ত করে দিলেন। একদা আলিপুর সেন্ট্রাল জেলকে মুখ্যমন্ত্রী আলিপুর মিউজিয়ামে বদলে দিলেন।

আরও পড়ুন – পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা ধামা চাপা দিচ্ছে, অভিযোগ বিজেপি নেতা অমিত মালব্যের

আইনজীবী তারাপদ লাহিড়ি ও আইনজীবী অনিলদাস পাল চৌধুরী কমিটি জেলকে ‘কারেকশনাল হোম’-এ বদলের কথা সুপারিশ করেছিলেন। আলিপুর জজেস কোর্টে আলিপুর ঐতিহাসিক মামলার নথি সাধারণের জন‍্য দেখাবার ব‍্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু কোনটি মানুষ টানতে পারেনি। এখন তা বিস্মতির অলে তলিয়ে গেছে। মুখ‍্যমন্ত্রী একটা কথা ঠিকই বলেন ‘সিপিএম ঠিকমত কাজ করতে শেখেনি’। প্রশাসনের কাজ কীভাবে করতে হবে সত‍্যিই তা শিখতে হবে মমতা ব‍্যানার্জীর কাছ থেকে। আলিপুর মিউজিয়াম করে তিনি আরো একটি অনন‍্য নজির স্থাপন করলেন যা তাকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top