কালীপুজোর বিশেষ দিনে এবছর খুলবে না সীমান্তের গেট, হতাশ দুই দেশের মানুষ। প্রতিবছর কালিপুজোর বিশেষ দিনে দুই দেশের মানুষের জন্য পুজো উপলক্ষে খুলে দেওয়া সীমান্তের গেট। বিগত দুই বছরে অনেক কিছুর পরিবর্তন হলেও দেখা হচ্ছে না আত্মীয়দের সঙ্গে। তবে এবার কী পুজো দেওয়া বা দেখা হবে আত্মীয়দের সঙ্গে। এই নিয়ে প্রমাদ গুনছে দীর্ঘ দিন দেখা না হওয়া দুই দেশের মানুষ। এক দিকে করোনা আবহ অন্যদিকে বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতি। এই পরিস্থতিতে এবারও খুলবে না সীমান্তের গেট , প্রিয় মিলন অধরাই, হতাশ মহদীপুর।
দুই বাংলার মানুষের দুপারের জওয়ানদের দাপাদাপি দেখে প্রশ্ন, ‘দুদেশের মাটির তো একই গন্ধ ৷ গঙ্গার জলই ভাগ করে নেয় দুই দেশের মানুষ ৷ দুদেশের ভাষাও এক ৷ একই মানুষ দুদেশের জাতীয় সংগীত রচনা করেছেন ৷ তাহলে আন্তর্জাতিক আইন কেন দুদেশের মানুষকে এত দূরে সরিয়ে রেখেছে ? বাংলাদেশ কি ভারতের কাছে নেপাল কিংবা ভুটান হতে পারে না ?’দুই বছর পরে কালি পূজোর দিন তাদের আত্মীয়দর সাথে দেখা হবে?
কালীপুজোর পরদিন প্রতি বছরের মতো এবারও দেখা করার জন্য উদগ্রীব ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ইংরেজবাজারের মহদিপুরে ৷ বিধি বাম ৷ দেশের প্রতিটি সীমান্তে এখন ভিনদেশি জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে কড়া সেনা। তার ওপর করোনা ও বাংলাদেশের অস্থির অবস্থা রাঙা চোখে মহদিপুর সীমান্তেও মোতায়েন রয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী ৷
এবার কাউকে কোনও ছাড় দেওয়া নয় ৷ পুজোতে খোলা হবে না দুদেশের মধ্যে থাকা লোহার কালো দরজা ৷ তাই কাঁটার ওপারে দাঁড়িয়ে থাকে বাড়ির লোকগুলোকে ঠিক ভাবে ছোঁয়া হয়নি জীবনবাবুর ৷ তবে এবার কি আর দেখা হবে। শুধু জীবনবাবুই নন, তাঁর মতো কয়েক হাজার মানুষ ওইদিন ভিড় করেন ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মহদিপুর সীমান্তে ৷
কাঁটাতারের পাশেই হয় শ্মশানকালী পুজো ৷ আগে এই পুজো বেড়ার ওপারে হত ৷ এখন সেই জায়গা বাংলাদেশের মধ্যে পড়ে গিয়েছে ৷ ফলে ১৯৭১ সাল থেকে পুজোর স্থান পরিবর্তন হয় ৷ পুরোনো জায়গা থেকে কিছুটা দূরে পাগলা নদীর ধারের শ্মশানভূমিতে এই পুজো তুলে নিয়ে আসেন মহদিপুরের দুই বাসিন্দা নাথুরাম ঘোষ ও শশাঙ্কশেখর মজুমদার ৷ তখনও দুই দেশের মধ্যে তারকাঁটার বেড়া বসেনি ৷ পরে অবশ্য অবস্থার পরিবর্তন হয় ৷ কাঁটার বেড়া দুদেশের মধ্যে চলে আসে ৷ পুজোর বেদিটি পড়ে যায় বেড়ার ওপারে ভারতীয় ভূখণ্ডে ৷
আর ও পড়ুন মুক্তি পেলেন আরিয়ান, ফিরলেন মন্নতে
তবুও ২০০৬ সাল পর্যন্ত কারোর কোনও অসুবিধে হয়নি ৷ পুজোতে খুলে দেওয়া হত লোহার গেট ৷ ওপারের সঙ্গে এপারের মানুষও বহাল তবিয়তে পুজো দিতেন মায়ের ৷ কিন্তু সে বছরই পুজোর দিন জাল নোট সহ বিএসএফ-এর হাতে ধরা পড়ে যায় এক বাংলাদেশি ৷ তারপর থেকেই এই পুজোয় বিএসএফ-এর কড়াকড়ি অনেক বেড়ে গিয়েছে ৷
তবে মানুষের আবেগের কথা ভেবে তারপরেও বিএসএফ কিছুক্ষণের জন্য প্রতি বছর কিছুটা সময় উন্মুক্ত করে দিত গেট ৷ কিন্তু এবার সেসব নৈব নৈব চ৷ শ্মশানকালী পুজোয় অংশ নিতে একদিকে যেমন জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো মানুষ মহদিপুর সীমান্তে এসেছিলেন, তেমনই পরিজনদের দেখতে, একবার কথা বলতে বেড়ার ধারে হাজির হয়েছিলেন চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার কানসাট, বালিয়াদিঘি, সোনা মসজিদ, বারেকবাজার, রানিবাড়ি, চাঁদপুর প্রভৃতি গ্রামের অসংখ্য মানুষ ৷ শুধু হিন্দুরাই নন, ইসলাম ধর্মাবলম্বীরাও ওইদিন সকাল থেকে উপস্থিত হয় সীমান্তে। মায়ের বেদিতে তাঁরাও ধর্মের আগল ভেঙে পুজো দিয়েছেন ৷ ওপারে থাকা পরিজনদের সুস্থতা কামনা করেছেন।