বিহার – অন্য রাজ্যগুলির মতো বিহারেও আসন্ন নির্বাচনের আগে বিভিন্ন দল ও জোটের তরফে সুবিধা বিলির প্রতিযোগিতা চলছে জোরকদমে। তবে সেই প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘোষণা করে শিরোনামে উঠে এলেন বিরোধী জোটের মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী তেজস্বী যাদব। আরজেডি (RJD) সুপ্রিমো তেজস্বী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সরকার গঠন করলে বিহারের বিতর্কিত মদনীতিতে বড় পরিবর্তন আনবেন তিনি। নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে তেজস্বী ঘোষণা করেন, রাজ্যে দেশীয় মদ তৈরি ও বিক্রির অনুমতি দেওয়া হবে।
২০১৬ সাল থেকে বিহারে মদ নিষিদ্ধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রতিবছর প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয় রাজ্য সরকারের। বিজেপি-সহ শরিক দলগুলি একাধিকবার আপত্তি জানালেও নীতীশ নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন। তাঁর দাবি, মদ নিষিদ্ধ করার ফলে মহিলারা পারিবারিক নির্যাতন থেকে অনেকটাই মুক্তি পেয়েছেন, তাই এই নীতি বজায় রাখা জরুরি। বাস্তবে মহিলা ভোটারদের এক বড় অংশ নীতীশের এই সিদ্ধান্তের পক্ষে থেকেছেন।
তবে বিরোধীরা অন্য চিত্র তুলে ধরেছে। তাদের মতে, রাজ্যের নিম্নবর্গের বহু মানুষ, বিশেষ করে পাসি সম্প্রদায়ের সদস্যরা, প্রজন্মের পর প্রজন্ম দেশি মদ তৈরি ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। রাজ্য ড্রাই হওয়ার ফলে এই সম্প্রদায়ের জীবিকা প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। যদিও জনসংখ্যায় পাসিরা মাত্র এক শতাংশ, তবুও নির্বাচনে তাদের ভোট প্রভাব যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তাই তেজস্বীর এই প্রতিশ্রুতি আসলে অর্থনৈতিক স্বস্তির পাশাপাশি সামাজিক ভোট-রাজনীতির অঙ্কও বটে, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
মঙ্গলবার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে তেজস্বী যাদব বলেন, “আমরা কাউকে ভাতে মারতে চাই না। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন নীতীশ কুমারকে আমি অনুরোধ করেছিলাম, গরিব মানুষের রোজগারে ধাক্কা লাগে এমন সিদ্ধান্ত না নিতে। আমি বলেছিলাম, বিহারের দেশি মদ তৈরি ও বিক্রির অনুমতি দেওয়া উচিত। অনেক মানুষ এগুলিকে স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবেও গ্রহণ করেন, চিকিৎসকরাও এতে আপত্তি জানাননি।”
নীতীশ কুমারের শরিক দল হিন্দুস্থানী আওয়াম মোর্চার নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন রাম মাঝিও একই মত পোষণ করেছেন। তাঁর মতে, মদের উপর ১০০ শতাংশ নিষেধাজ্ঞা মোটেই বাস্তবসম্মত নয়। জন সুরাজ পার্টির প্রধান প্রশান্ত কিশোরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সরকার গঠন করলে মদ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবেন। তাঁর বক্তব্য, নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বিষমদে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে এবং গার্হস্থ হিংসা কমেনি। বরং রাজ্য রাজস্বে বিপুল ক্ষতি হচ্ছে।
তবে মহিলা ভোটব্যাঙ্ক হারানোর ঝুঁকি এড়াতে বিরোধী জোট বাড়তি সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ইশতেহারে বলা হয়েছে, সরকার গঠন হলে প্রত্যেক দুস্থ মহিলাকে মাসে আড়াই হাজার টাকা আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে। সঙ্গে সস্তায় গ্যাস সিলিন্ডার ও ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়ার ঘোষণাও রয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই পদক্ষেপ নীতীশ কুমারের মহিলা ভোটভিত্তিতে বড় ফাটল ধরাতে পারে।



















