কলকাতা – কলকাতায় ফের বিদ্যুৎপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। শনিবার সকালে বেহালার সরশুনার ক্ষুদিরাম পল্লীর তালপুকুর রোডে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারালেন ৬৬ বছরের শ্রাবন্তী দেবী। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তায় জমে থাকা জলের কারণেই এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে। সোমবার রাতের প্রবল বর্ষণে কলকাতার বহু এলাকা কার্যত ডুবে যায়, আর সেই জলাবদ্ধতাই শহরের নাগরিকদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরে কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে জমা জলে একাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎপিষ্ট হয়ে ১১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এই পরিস্থিতি নগর নিকাশি ব্যবস্থার করুণ দশা প্রকাশ করে দিয়েছে। উৎসবের মরশুমে তড়িঘড়ি কিছু জলনিকাশের কাজ করা হলেও সেগুলি ছিল অবৈজ্ঞানিক ও অস্থায়ী বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবারও বেহালার একাধিক এলাকায় জল জমে থাকতে দেখা গেছে।
সকাল সাতটা নাগাদ শ্রাবন্তী দেবী দোকানের শাটার খোলার সময় জলমগ্ন অবস্থায় ধাতব শাটারে হাত দিতেই তড়িদাহত হন। তাঁকে দ্রুত স্থানীয় বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
সিইএসসি কর্তৃপক্ষ অবশ্য জমাজলকে দায়ী করেনি। তাদের দাবি, দোকানের ছাদের টিন শেডে লাগানো আলোর তার থেকেই দুর্ঘটনাটি ঘটে। তবে বাসিন্দারা এই দাবি মানতে নারাজ। তাঁদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা জলেই বিপর্যয় ডেকে এনেছে।
বাসিন্দাদের ক্ষোভ, পাঁচদিন কেটে গেলেও এলাকায় এখনও জল জমে রয়েছে। প্রশাসনের কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নেই। তাঁদের অভিযোগ, নিকাশির অদক্ষতা ও নজরদারির অভাবেই একের পর এক প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।
প্রসঙ্গত, সোমবার রাতের টানা পাঁচ ঘণ্টার বৃষ্টিতে কলকাতার বহু এলাকা প্লাবিত হয়। রাস্তাঘাট থেকে ঘরবাড়ি—সবই জলের তলায় চলে যায়। সেই থেকেই শুরু হয় বিদ্যুৎপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর পর্ব।
রাজনৈতিক মহলেও এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। শাসক দল তৃণমূল ও সিইএসসি পরস্পরের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। নাগরিকরা বলছেন, দোষারোপের খেলা চললেও সমস্যার কোনও সমাধান হচ্ছে না।
বামপন্থী দলগুলো ইতিমধ্যেই এই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে। তারা মৃত পরিবারগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া, নিকাশির স্থায়ী সমাধান এবং কর্পোরেশনের অব্যবস্থার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। শহরে প্রতিবাদ মিছিলও হয়েছে।
সিপিআই(এম) কলকাতা জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এত মৃত্যু ও দুর্ভোগের পরেও প্রশাসন শিক্ষা নেয়নি। যেখানে এখনও জল জমে রয়েছে, সেখানে কোনও নজরদারি নেই। বিদ্যুতের তার, ল্যাম্পপোস্ট সবই বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে।
তিনি দাবি করেছেন, দায়সারা কাজ নয়, স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। পাশাপাশি অবৈজ্ঞানিক নির্মাণ, পুকুর-জলাভূমি ভরাট বন্ধ করে পরিবেশের স্বাভাবিক ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।
কল্লোল মজুমদার আশ্বাস দিয়েছেন, এই দুরবস্থা ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার বিরুদ্ধে বামপন্থী দলগুলো ধারাবাহিক লড়াই চালিয়ে যাবে।
