দেশ – ভারতীয় পণ্যের উপরে শুল্ক বৃদ্ধি নিয়ে হুঙ্কারকে বাস্তবে রূপ দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার (৬ অগস্ট) তিনি একটি কার্যনির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করে জানিয়েছেন, ভারতীয় পণ্যের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। ফলে আমেরিকায় রফতানি হওয়া ভারতীয় পণ্যের উপর এখন থেকে মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিপুল শুল্কের বোঝা বহন করে মার্কিন আমদানিকারকরা আদৌ ভারতীয় পণ্য কিনবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (৭ অগস্ট) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কড়া বার্তা দিয়ে জানিয়েছেন, কৃষক, পশুপালক ও জেলেদের স্বার্থে তিনি কখনও আপস করবেন না। দিল্লিতে এমএস স্বামীনাথন শতবর্ষ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মোদি স্পষ্ট করেন, কৃষকদের অগ্রাধিকারই তার কাছে প্রধান। তাদের জন্য বড় মূল্য চোকাতেও তিনি প্রস্তুত। দেশের কৃষক ও প্রান্তিক উৎপাদকদের স্বার্থ রক্ষার প্রশ্নে কোনও আন্তর্জাতিক চাপের কাছে মাথা নত করবেন না তিনি।
ট্রাম্প এই শুল্ক বৃদ্ধির কারণ হিসেবে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানিকে দায়ী করেছেন। গত মঙ্গলবার (৫ অগস্ট) মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘সিএনবিসি’-তে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ভারতের রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রয়েছে, যা রাশিয়াকে ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পরোক্ষভাবে সাহায্য করছে। শুধু তাই নয়, ভারত ওই তেল কম দামে কিনে আন্তর্জাতিক বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে মুনাফা করছে বলেও অভিযোগ করেন ট্রাম্প। তার দাবি, ভারত একতরফা ভাবে আমেরিকার বাজার ব্যবহার করছে অথচ আমেরিকান পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে সুযোগ কম। ফলে এই পরিস্থিতিতে শুল্ক বৃদ্ধির ছাড়া আর কোনও রাস্তা ছিল না বলেই মন্তব্য করেন তিনি।
এই শুল্কবৃদ্ধির ফলে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলির তুলনায় ভারতের উপর শুল্কের হার অনেক বেশি হয়ে দাঁড়াল। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশি পণ্যের উপর যেখানে আমদানি শুল্ক ২০ শতাংশ, সেখানে ভারতীয় পণ্যের উপর এখন ৫০ শতাংশ কর দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর। সরকারের মতে, এই একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত ভারতের রফতানি খাতে সরাসরি প্রভাব ফেলবে এবং একাধিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি সংস্থাকে বাণিজ্যিক সংকটে ফেলতে পারে।
ওয়াশিংটন-দিল্লি সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত এক নতুন টানাপড়েনের সূচনা করল বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল। এখন দেখার বিষয়, মোদি সরকারের পক্ষ থেকে এই শুল্ক বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আরও কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
