খেলা – ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ মানেই তীব্র উত্তেজনা, অঝোর বিতর্ক আর আলোচনার কেন্দ্রে থাকা মুহূর্ত। এশিয়া কাপ থেকে মহিলাদের বিশ্বকাপ—দুই দেশের ক্রিকেটে বহুবার দেখা গেছে ‘নো হ্যান্ডশেক’ নীতি। এবার সেই একই দৃশ্য সামনে এল ‘এশিয়া কাপ রাইজিং স্টারস ২০২৫’-এর ভারত–পাকিস্তান ম্যাচেও। ম্যাচের শুরুতেই করমর্দন হয়নি, আর ম্যাচের শেষে ভারত ‘এ’ দলের অধিনায়ক জিতেশ শর্মা আবারও সেই ‘নো হ্যান্ডশেক’ সিদ্ধান্তে অটল থাকলেন। রাজনৈতিক টানাপড়েন ক্রিকেট মাঠেও ছাপ ফেলল স্পষ্টভাবে।
রবিবার অনুষ্ঠিত ম্যাচে টসে জিতে পাকিস্তান ‘এ’ দলের অধিনায়ক ইরফান খান নিয়াজি ভারতকে ব্যাট করতে পাঠান। শুরুটা ভাল করলেও মাঝপথে ব্যাটিং লাইন-আপ ভেঙে পড়ে। বৈভব সূর্যবংশী ৪৫ এবং নমন ধীর ৩৫ রান করলেও বাকিরা বিশেষ কিছু করতে পারেননি। ফলে ভারত মাত্র ১৩৭ রানের লক্ষ্যই দাঁড় করাতে সক্ষম হয়। ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান খুব একটা চাপে পড়েনি। ভারতের বোলিংয়ে চেষ্টা থাকলেও ধার ছিল না। মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে সহজেই ম্যাচ জিতে নেয় পাকিস্তান ‘এ’ দল।
তবে ম্যাচের ফলাফলের থেকেও বেশি আলোচনা হয় ম্যাচ-পরবর্তী সেই দৃশ্য নিয়ে, যেখানে দুই অধিনায়কের মধ্যে কোনও হ্যান্ডশেক হয়নি। বড়দের স্তরে সূর্যকুমার যাদবের ‘নো হ্যান্ডশেক’ সিদ্ধান্ত নিয়ে আগেও বিতর্ক নির্মিত হয়েছিল। মহিলাদের বিশ্বকাপে হরমনপ্রীত কৌরের একই অবস্থানও নজর কেড়েছিল। এবার নজর ছিল যুব দলের উপর—তারা কি এই প্রথা ভাঙবে? জিতেশ শর্মার আচরণ সেই প্রশ্নের উত্তর স্পষ্ট করে দেয়। তিনি পরিষ্কার বুঝিয়ে দেন, ভারতীয় ক্রিকেটে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘নো হ্যান্ডশেক’ নীতি চলছে এবং এই অবস্থান থেকে এখনই সরার কোনও সম্ভাবনা নেই।
পহেলগাম হামলার পর দুই দেশের সম্পর্ক আরও তলানিতে ঠেকেছে। সেই প্রেক্ষিতেই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড ঠিক করেছে যে জাতীয় দলের পাশাপাশি বয়সভিত্তিক দলগুলিও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হ্যান্ডশেক করবে না। যুব এশিয়া কাপে জিতেশদের আচরণ সেই নীতিরই পুনরাবৃত্তি বলেই মনে করছে মহল।
যদিও এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে সমালোচনা আছে। অনেকেই মনে করেন, মাঠের খেলাকে রাজনৈতিক সম্পর্কের ছায়া এড়ানো জরুরি। হ্যান্ডশেক না করার ফলে খেলোয়াড়দের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে কি না—তাও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। তবে আরও একাংশের মতে, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিচার করলে জিতেশ–বৈভবদের অবস্থান সময়োপযোগী। তাঁরা বড়দের পথ অনুসরণ করেই জানিয়ে দিলেন, নিঃশব্দেও জবাব দেওয়া যায়।
সব মিলিয়ে, মাঠে লড়াই যেমন হয়েছে, মাঠের বাইরে দূরত্বও ততটাই স্পষ্ট হয়েছে। ভারতীয় দলের অবস্থান পরিষ্কার—এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বের বার্তা দেওয়া সম্ভব নয়। সেই বার্তাই আরও একবার দিলেন জিতেশ শর্মা।



















