ভিভের ডেরায় এক বাঙালির মাস্তানি

ভিভের ডেরায় এক বাঙালির মাস্তানি

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram

তিনি নিজেই এগিয়ে এসেছিলেন। টিম ম্যানেজমেন্টকে বোঝাতে প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সতীর্থদের বোঝাতে পেরেছিলেন। বিশ্বকাপে তিনি তিন নম্বরে ব্যাট করতে চান। এটাও জানতেন, যদি একটা ম্যাচে ব্যর্থ হন তাহলে আবার তাঁকে নেেম যেতে হবে পাঁচ নম্বরে। তাই চোয়াল শক্ত করে নিজের বিশ্বাসে অটুট ছি‍লেন। তিন–এ তিনি পারবেন।
পারলেন। দেখাচ্ছেনও। তিন নম্বরে ব্যাট করে বিলেতের বিশ্বকাপে পরপর দুটো শতরান! ভাবা যায় না! সাকিব আল হাসান বুঝিয়ে দিচ্ছেন তাঁর নিজস্ব সিদ্ধান্তে কোথাও ভুল ছিল না। অদ্ভুতভাবে বির্তক তাঁকে কখনও পিছু ছাড়ে না। এবারও বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ ফোটো সেশনে তিনি ‘ভুল’ বোঝাবুঝিতে অনুপস্থিত থাকায় কম বির্তক হয়নি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি পাপনভাই ক্ষেপে গিয়েছিলেন সাকিবের ওপরে। সাকিব একটা কথাও প্রকাশ্যে বলেননি। জবাব দেবেন এভাবে তা বোধহয় কেউ জানত না।
ফেরা যাক টনটনে। আহা, ওসেন টমাসের বলে কভার ড্রাইভটা। যা সমুদ্র তীরবর্তী যে কোনও মেরিন ড্রাইভের মতোই। ভোলার নয়। যে ড্রাইভে সাকিব শতরানে পৌঁছলেন তা টনটনের গ্যালারিতে টেনশনে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বসা তাঁর স্ত্রী শিশিরের অনামিকায় হীরের আংটির থেকেও উজ্জ্বল। ভিভ রিচার্ডসের েডরা সমারসেটে সাকিবের মাস্তানি মনে থাকবে বহুদিন। যা আবার ভিভের দেশের বিরুদ্ধেই! বাঘের ‘বাচ্চা’ বটে। ৩২১ রান তাড়া করে দেশকে জেতানোর পাশাপাশি সাকিবের আরেকটি বড় প্রাপ্তি কিংবদন্তি জোয়েল গার্নারের হাত থেকে ম্যাচের সেরা উপহার।
সঙ্গে ছিলেন আরেক বাঙালি। লিটন দাস। টনটনের মনে থাকবে লিটনকে। সাকিব ‘ভাই’ লিটনকে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে তুললেন ১৮৯ রান। ম্যাচ জেতানোর রসদ তো এই যুগলবন্দিতেই। সাকিবের অপরাজিত ১২৪ রানের ইনিংস এবং লিটনের অপরাজিত ৯৪ রানে ইনিংস বিশ্বকাপের ইতিহাসে জ্বলজ্বল করতে বাধ্য। ক্যারিবিয়ান পেস আক্রমণের সামনে বুক চিতিয়ে ব্যাটিং দুই বাঙালির। বিলেতের বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়। যা ঢাকা–কলকাতাকে একাকার করে দিতে বাধ্য। সত্যি, কী স্থিতধী তিনি। বাড়তি কোনও মাদকতা নেই। যেমন নেই তাঁর ব্যাটিংয়েও। সোজা সোজা খেললেন। সঙ্গে ছিল কাট। না, ১২৪ রান করতে দরকার পড়েনি একটি ছয়েরও। নিজের মতো করে ইনিংস সাজালেন সাকিব। যেমন মিষ্টি হাসেন তেমনই তাঁর মিষ্টি ইনিংস। বেশি ঢাক গুড়গুড় নেই। সোজা ব্যাটে খেলে যে অনেক কঠিন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায় তা আবারও প্রমাণিত বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডারের কাছ থেকে। সোমবারই ব্যাট করতে করতে কখন যে তিনি ২৫০–র বেশি উইকেট এবং ৬০০০ রান করে টপকে গেলেন জাক কালিস, সনৎ জয়সূর্য, শাহিদ আফ্রিদিকে তা বোধহয় তিনি নিজেও বুঝতে পারেননি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের এই ৭ উইকেটে জয় যেন সাকিবের ক্ষেত্রে ১০–এ ১০ পাওয়ার মতোই। একদিনের আন্তর্জাতিক পরপর পাঁচটি অর্ধশতরান! এটাও তো প্রাপ্তি সাকিবের।
লাজুক সাকিবকে শেষ আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ বেশি ম্যাচ খেলায়নি। বেশিরভাগ সময়ে তাঁকে বসে থাকতে হয়েছে শুধু ডাগআউটেই। একাদশের বাইরে। টনটনের এই ইনিংসটি যে তারও একটা মোক্ষম জবাব। ফ্রাঞ্চাইজি মালিকেরা যখন কলকাতা থেকে সাকিবকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তখন কী ভেবেছিলেন যে বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডারকে বসিয়ে রাখার ‘স্পর্ধার’ জবাব এভাবে পেতে হবে? সাকিবের মতো মিষ্টভাষী ভদ্রলোকেরা মুখে জবাব দিতে জানেন না। চানও না। জবাব দেয় কখনও ব্যাট আবারও কখনও বল।‌

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top