ভোটের আগে তৃণমূলের আদি–নব্য দ্বন্দ্বে জলপাইগুড়িতে উত্তেজনা, অঞ্চল কমিটি নিয়ে চরম ক্ষোভ

ভোটের আগে তৃণমূলের আদি–নব্য দ্বন্দ্বে জলপাইগুড়িতে উত্তেজনা, অঞ্চল কমিটি নিয়ে চরম ক্ষোভ

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram



জলপাইগুড়ি – ভোটের আগে তৃণমূলের অন্দরে ফের মাথাচাড়া দিল আদি–নব্য দ্বন্দ্ব। জলপাইগুড়ি জেলায় নতুন অঞ্চল কমিটি ঘোষণা হতেই বিতর্ক তুঙ্গে। অভিযোগ, বেশ কয়েকটি অঞ্চলে দীর্ঘদিনের আদি তৃণমূল কর্মী–নেতাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আর এর জেরেই দলীয় অন্দরে ক্ষোভ ও অশান্তি ছড়িয়েছে। কোথাও কোথাও এই গণ্ডগোল প্রকাশ্যেও এসেছে, বিশেষ করে জলপাইগুড়ির বাহাদুর অঞ্চলে।

অভিযোগ, বাহাদুর অঞ্চলের নতুন অঞ্চল কমিটির সভাপতি করা হয়েছে হরেকৃষ্ণ শর্মাকে—যিনি মাত্র ছয় মাস আগে সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। নতুন কমিটিতে কোনও আদি তৃণমূল নেতাকে জায়গা দেওয়া হয়নি বলেই দাবি কর্মীদের একাংশের। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে তৃণমূলের জেলা কমিটির সদস্য পল হাসানের নেতৃত্বে বিক্ষুব্ধ আদি তৃণমূল কর্মীরা বৈঠক করে কার্যত দলের বিরুদ্ধে ‘জেহাদ’-এর ডাক দিয়েছেন। তাঁদের সাফ বক্তব্য—সদ্য সিপিএম ছেড়ে আসা কাউকে অঞ্চল সভাপতি মানা যাবে না, অবিলম্বে পদ পরিবর্তন করতে হবে।

প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি মেহেবুব আলমও ক্ষোভ উগরে দিয়ে জানান, “যিনি আমাদের দলে এসেছেন মাত্র ফেব্রুয়ারিতে, যিনি কোনও দিন তৃণমূলকে ভোট দেননি, তাঁকে সভাপতি করা মানা যায় না। দলকে ১৫ দিন সময় দিয়েছি। সভাপতি বদল না হলে চরম সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” বিক্ষুব্ধ কর্মী মহসীন হোসেন আরও একধাপ এগিয়ে বলেন, “হরেকৃষ্ণ শর্মা সিপিএম আমলে আমাদের মারত। তাঁকে অঞ্চল সভাপতি মানার প্রশ্নই ওঠে না।”

জেলা কমিটির সদস্য পল হাসানের অভিযোগ, এক প্রভাবশালী নেতা ও আইপ্যাকের যোগসাজশেই এই নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে। তাঁর দাবি, “যে প্রভাবশালী নেতা এই অঞ্চল থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে থাকেন, তিনি কীভাবে এখানকার বাস্তব পরিস্থিতি জানবেন? গত বিধানসভা ভোটে যখন পৌর এলাকায় দল পিছিয়ে গিয়েছিল, তখন আমরাই বুথ ধরে লিড দিয়েছিলাম।”

অন্যদিকে, নতুন সভাপতি হরেকৃষ্ণ শর্মা বলেন, “কে কী বলছে তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি নিজে পদ চাইনি, দল আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে।” এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মাঝে প্রতিপক্ষ বিজেপিও সরব হয়েছে। বিজেপির সদর উত্তর মণ্ডলের ভাইস প্রেসিডেন্ট দেবাশিস রায় বলেন, “তৃণমূলের কোনও আদর্শ নেই। সিপিএমের লোকই এখন ওদের অঞ্চল সভাপতি! এটা পিসি–ভাইপোর দল ছাড়া আর কিছু নয়।”

তৃণমূলের জেলা সম্পাদক বিকাশ মালাকার অবশ্য পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে মন্তব্য করেন, “একই লোক চিরকাল একই পদে থাকবে, তা হয় না। নতুন–পুরনো মিলিয়েই চলতে হয়। আমিও সব কমিটিতে নেই। তাই বলে ক্ষোভ দেখানো যায় না। ভোটের মুখে আমাদের কাজ আদি–নব্য মিলিয়ে মমতা ব্যানার্জী ও অভিষেক ব্যানার্জীর হাত শক্ত করা।”

জলপাইগুড়ির রাজনৈতিক অন্দরে এই আদি–নব্য দ্বন্দ্ব নতুন নয়, তবে নির্বাচনের আগে এই সংঘাত তৃণমূলের জন্য নিঃসন্দেহে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top