১৫ জানুয়ারি, বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ।শুধু মূর্তি পূজার উপরই যে বাঙালি নির্ভর করে আছে তা কিন্তু নয়, খাওয়া-দাওয়া-মেলা সবকিছুতেই আনন্দ খুঁজে নিচ্ছে বাঙালি।আজকের দিনের এই মকর সংক্রান্তি বা পৌষ সংক্রান্তি বাঙালির কাছে এক শ্রেষ্ঠ উৎসব।পৌষ মাসের শেষ দিনে এই উৎসব পালন করা হয়।নানা প্রকার পিঠে এদিন থাকছে সারাদিনের খাবার মেনুতে।তবে শুধু কি এই দুদিন? পুরো এক সপ্তাহ ধরে চলে এই খাওয়া-দাওয়া।এদিন এই উৎসবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।সকালে-বিকেলে ঘুড়ি ওড়ানো আর খাওয়া-দাওয়া।মজে থাকে সকল বাঙালি।কারণ আমরা জানি, বাঙালি বরাবরই খাদ্য রসিক।
বিভিন্ন অঞ্চলে এই উৎসবের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য আছে, কোথাও কোথাও চার দিন পর্যন্ত উৎসব চলে। বাংলায় পৌষ সংক্রান্তি, তামিলনাড়ুতে পোঙ্গল, গুজরাতে উত্তরায়ণ, অসমে ভোগালি বিহু, পঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ ও জম্মুতেকর সংক্রান্তি বাঙালির একটি উল্লেখযোগ্য উৎসব। পৌষ মাসের শেষ দিন এই উৎসব পালন করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলের জেলায় ও ওডিশার একাংশে হয় টুসু উৎসব।
মকর সংক্রান্তির দিন দূর যাত্রা করা শুভ নয় বলে মনে করা হয়।কথিত আছে প্রাচীনকালে এক মুনি নিজের বাড়ি থেকে ওই দিন যাত্রা শুরু করেন এবং তিনি আর কোনও দিন ফিরে আসেননি। তারপর থেকেই এই যাত্রা না করার প্রচলন। প্রাচীন রীতি যতই থাকুক না কেন, আসলে এই দিনটিতে যাতে সকলে মিলে একসঙ্গে আনন্দ করা যায় সম্ভবত সেই কারণেই এই নিয়মটি পালন করা হয়।এদিন পূন্য স্নানের দিন, অনেকে গঙ্গায়, সমুদ্রে বা নদীতে স্নান করে পূন্য অর্জন করেন। মূলত জ্যোতিষশাস্ত্রে এটি একটি ‘ক্ষণ’। এই দিন সুর্য তার নিজ কক্ষপথ থেকে মকর রাশিতে প্রবেশ করে। তাই এই দিনটিকে মকর সংক্রান্তি বলে।
১।বলা হয়, এই দিন ঘর-বাড়ি পরিষ্কার পরিছন্ন করে রাখলে তা ভালো৷ মকর সংক্রান্তির দিনে সাধারণত সূর্যের পুজো করা হয়। যার ফলে গঙ্গায় স্নান করলে সকল রকম রোগ ব্যাধি দূর হয়।
২। মকর সংক্রান্তি আনন্দ ও উত্সবের সঙ্গে পালন করা হয়। তাই ওই দিন কোনোও দুস্থ এলে তাঁকে কখনোই খালি হাতে ফেরাতে নেই। বিশ্বাস করা হয়, এতে গৃহে অন্নের অভাব হয় না এবং সুখ শান্তি বজায় থাকে।
৩। মকর সংক্রান্তির দিন সবার আগে স্নান করে সূর্যদেবের পুজো করার নিয়ম প্রচলিত আছে।
৪। মকর সংক্রান্তি বাঙালির প্রিয় একটি উৎসব। এদিন গুড়, চাল, দুধ দিয়ে নানা ধরনের উপাদেয় মিষ্টি, পিঠে-পায়েস ইত্যাদি তৈরি করা হয়। কথিত আছে এই বিশেষ দিনটিতে সূর্যদেব তার পুত্র শনি দেবতার প্রতি তার ক্ষোভ ভুলে যান এবং তার গৃহে সূর্যদেবের আগমন ঘটে। তাই এই দিনে সকলে মিলিত হয় এবং মিষ্টি মুখ করে সম্পর্ক বজায় রাখার অঙ্গীকার করে।