২০০ বাংলাদেশী মহিলা পাচারের অভিযোগে আটক এক বাংলাদেশী নাগরিক। এক এক করে মোট ৭৫ টা বিয়ে। দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে গরিব পরিবারের যুবতীদের বিয়ে করতেন মুনির। এরপর দালালের হাত ধরে নিজের বিয়ে করা স্ত্রী’দেরই অবৈধভাবে বাংলাদেশ সীমান্ত পার করিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হতো ভারতে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশের পরে তাদের কলকাতায় একটি গোপন ডেরায় নিয়ে যাওয়া হতো।
সেখানেই চলত একপ্রস্থ প্রশিক্ষণ, সেখানে ওই পাচারকারী যুবতী-নারীদের চৌকশ করার পর মুম্বাইতে নিয়ে গিয়ে দ্বিতীয় দফায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। সবশেষে চাহিদা অনুযায়ী ভারতের বিভিন্ন শহরে তাদের সরবরাহ করা হতো। কেউ কেউ আবার হাত ঘুরে চলে যেতেন বিভিন্ন নিষিদ্ধপল্লীতে। আর এই ভাবেই চলে আসছিল দিনের পর দিন, মাসের পর মাস।
সম্প্রতি সেক্স র্যাকেট এর চক্রের সন্ধান পেয়ে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য আসে মধ্যপ্রদেশ পুলিশের হাতে। যদিও এই চক্রের হদিশ পেতে গত কয়েক মাস ধরে লাগাতার অভিযান চালাতে হয়েছে পুলিশকে। পুলিশ সূত্রে খবর গত ১১ মাসে বিভিন্ন এলাকা থেকে ১১ জন বাংলাদেশি যুবতী সহ ২১ জনকে উদ্ধার করা হয়। আটক করা হয় সাগর, আফরীন, আমরিন নামে ওই পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকা কয়েকজন ব্যক্তি কে।
সেই সময় বিষয়টি সামনে আসে যদিও ওই চক্রের মূল পান্ডা বাংলাদেশী নাগরিক মুনির ওরফে মনিরুল- এর নাগাল কিছুতেই পাচ্ছিল না পুলিশ। আর মুনিরের খোঁজে মধ্যপ্রদেশ পুলিশের তরফে ১০ হাজার আর্থিক পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছিল। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার গোপন সূত্রে খবর পেয়ে গুজরাটের সুরাট থেকে যশোরের বাসিন্দা মুনিরকে গ্রেপ্তার করে ভারতের মধ্যপ্রদেশের ইন্ডোর পুলিশের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিমের সদস্যরা। পরে তাকে ইন্ডোরে নিয়ে আসা হয়।
পুলিশি জেরায় বাংলাদেশী যুবতী এবং নারীদের ভারতে পাচার করার কথা স্বীকার করেছে মুনির। পুলিশের কাছে মুনির এও জানায় গত পাঁচ বছর ধরে এই কাজ করে আসছে সে। তার হাত ধরে এখনো পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক নারী কল গার্লে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে অবৈধ পথে ভারতে পাচারের জন্য সীমান্তে টহলরত বাহিনীর সদস্যের রুপি দিতে বলেও জানায় মুনির।
মুনির জানায় এখনো পর্যন্ত সে ৭৫ টা বিয়ে করেছে এবং তাদের অধিকাংশ গরীব এবং দরিদ্র পরিবারের নারী। আর দারিদ্রতার সেই সুযোগ নিয়েই কাজের লোভ দেখিয়ে নিজের বিয়ে করা স্ত্রীদেরই ভারতে এনে বিক্রি করে দেয়া হতো এবং এই পেশায় ঠেলে দেওয়া হতো। পুলিশের দাবি মুনির আরো জানিয়েছে দালাল মারফত অরক্ষিত সীমানার ড্রেইন গুলি কে ব্যবহার করে সে বাংলাদেশ থেকে যুবতীদের ভারতে আনা হত এবং পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ সহ গ্রামীণ এলাকায় সেই সব নারীদের রাখা হতো। এরপর তাদের ভোপাল, ইন্দোর সহ ভারতের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো।
গত ১১ মাস ধরে মধ্যপ্রদেশের লাসুদিয়া এবং বিজয়নগর শহরে অভিযান চালিয়ে ১১ জন বাংলাদেশি নারী সহ ২১ জনকে উদ্ধার করা হয়। এরপর সেক্স র্যাকেট-এর বিষয়টি সামনে আসে। তবে কেবল মুনিরই নিয়ে, এর পিছনে একটি বড় চক্র রয়েছে বলেও অনুমান পুলিশের। তাই মুনিরকে জিজ্ঞেস করেই আরো বড় চক্রের হদিশ পেতে চাইছে মধ্যপ্রদেশ পুলিশ। বিজয়নগরের সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা তেহজীব কাজী জানান কয়েকদিন আগে সুরাট থেকে নিষিদ্ধ পল্লী এলাকার এক দালালকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আর ও পড়ুন ভোর রাতে পাকিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্প, মৃত কমপক্ষে ২০,আহত শতাধিক
সেসময় একটি গেষ্ট হাউসে অভিযান চালিয়ে ২১ জন নারীকেও উদ্ধার করা হয়, যার মধ্যে ১১ জন বাংলাদেশি। বাংলাদেশী নারীদের ভারতে পাচার করে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নিষিদ্ধ পল্লী এলাকায় কাজের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হয়। যদিও সেই সময় মূল অভিযুক্ত পালিয়ে যায়। এবং তাকে গ্রেপ্তারের জন্য ১০ হাজার রুপি আর্থিক ঘোষণা করা হয়েছিল।