পশ্চিম মেদিনীপুর – নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুপ্রিমকোর্টের রায়ে রাতারাতি চাকরি গিয়েছে ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার। যোগ্য-অযোগ্য সবার চাকরি গিয়েছে। যাতে মূহুর্তেই মাথায় যেন বজ্রপাত হয়েছে চাকরিহারা শিক্ষকদের। কারো মাথায় ব্যাপক ঋণের চাপ, কারো আবার বাড়ি তৈরির আগেই গেল চাকরি, কেউ পাওনাদারদের দ্বারা হেনস্থার শিকার হচ্ছেন।সব মিলিয়ে গোটা রাজ্য জুড়ে হাহাকার রব উঠেছে। ২০১৬ সালের SLST-র পুরো প্যানেল বাতিল করেছে সুপ্রিমকোর্ট। রাতারাতি চাকরি গিয়েছে ২৬ হাজারের। তাদের মধ্যে রয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণার ভুঁইয়া দম্পতিও। ২০১৬ সালের প্যানেলে নাম ওঠার পরে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই সরকারি স্কুলে চাকরি পেয়েছিলেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সব শেষ। সরকারি জমি কিনে বাড়ি করার জন্য ২০ লক্ষ টাকা লোন নিয়েছিলেন তাঁরা, চাকরি যাওয়ার পর সেই টাকা কী ভাবে মেটাবেন, এখন সেটা ভেবে ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছেন না পশ্চিম মেদিনীপুরের শান্তিনাথ ভুঁইয়া এবং তাঁর স্ত্রী রুবি চোংদার ভুঁইয়া।
চন্দ্রকোণা দু’নম্বর ব্লকের ধামকুড়া গ্রামের বাসিন্দা তাঁরা। ২০১৬-র এসএলএসটি-তে পাশ করার পর ইন্টারভিউ, কাউন্সেলিং শেষে ২০১৯ সালে একসঙ্গে চাকরি পান তাঁরা। কিন্তু রাতারাতি একসঙ্গে চাকরি যাওয়ায় ঘুম উড়েছে শিক্ষক দম্পতির। তাঁদের বাড়িতে রয়েছেন প্রবীণ বাবা-মা। পাশাপাশি বাড়ি তৈরির জন্যে ২০ লক্ষ টাকা লোন নিয়েছিলেন তাঁরা। জানা গিয়েছে, শান্তিনাথ হুগলির শ্যামবাজার গোপালচন্দ্র সেন হাইস্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন। এবং রুবি হুগলির গোঘাট ভগবতী বালিকা বিদ্যালয়ের ভৌত বিজ্ঞানের শিক্ষিকা ছিলেন। ২০১৯ সালে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হয় তাঁদের। তাঁদের ৫ বছরের একটি ছেলেও রয়েছে। ভাড়া বাড়িতেই তাঁদের বিয়ে হয়, তাই মাথার উপরে নির্দিষ্ট ছাদ ছিল না। তাই পাকাপাকি বাসস্থানের জন্যে একটি জমি কিনেছিলেন দম্পতি। সেখানে বাড়ি গড়ার পরিকল্পনা করছিলেন তাঁরা। কিন্তু সব আশা নিমেষেই শেষ হয়ে গেল সুপ্রিমকোর্টের রায়ে।
হয়তো এমনভাবে স্বপ্ন চুরমার হয়ে গিয়েছে অনেকেরই। এ বিষয়ে শান্তিনাথ বলেছেন, যোগ্যতার নিরিখে চাকরি পেয়েছিলেন তিনি। অবৈধদের চিহ্নিত করেছে বলেই তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। তাহলে কেন তাদের চাকরিটা কেড়ে নেওয়া হল? মাধ্যমিক থেকে এমএসসি সবেতেই তিনি ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। ফের পরীক্ষা দেওয়ার পরেও চাকরি পাওয়া যাবে কিনা নিশ্চিত নয়। স্ত্রী রুবি চোখে জলে বলেন, তাঁর বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি সবাই অসুস্থ। ৫ বছরের ছেলে রয়েছে। সঙ্গে মাথার উপর এত টাকা লোন! হঠাৎ করে এই নির্দেশে মাথার উপর আকাশ ভেঙে পড়েছে তাঁদের। তাঁদের এখন মুখ্যমন্ত্রীর উপরেই ভরসা রয়েছে।
