বিজেপিকে যত মারবে বিজেপি ততোই বাড়বে, বললেন শুভেন্দু। কেন্দ্র কমালেও পেট্রোপণ্যের কোনও শুল্ক কমায়নি রাজ্য সরকার। এর প্রতিবাদে আজ কলকাতায় প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করেছে বিজেপি। কিন্তু করোনার কারণে সেই মিছিলের অনুমতি দেয়নি পুলিশ। তবে পুলিশের নিষেধ অমান্য করেই মিছিল করছে বিজেপি। মিছিল শুরু হওয়ার কথা রাজ্য বিজেপির সদর দফতর থেকে।
মিছিল আটকাতে মেতায়েন বিশাল পুলিস বাহিনী। পরিস্থিতি থমথমে। পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে BJP-র রাজ্য দফতর থেকে রানি রাসমণি পর্যন্ত হবে মিছিলের কর্মসূচি রয়েছে শুভেন্দু অধিকারীদের। তবে BJP-র রাজ্য দফতরের কাছেই মিছিল আটকে দিল পুলিশ। তাদের তরফে জানানো হল, এই মিছিলের কোনও অনুমতি দেয়নি। তাই তা যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না।
এই নিয়ে সাংসদ জগন্নাথ সরকারের সঙ্গে বচসা বাঁধে পুলিশের। সাময়িক উত্তেজনা ছড়াও। পুলিসের ব্যারিকেডে ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করলে বেশকিছু বিজপি সমর্থককে জোর করে গাড়িতে তোলে পুলিশ। এনিয়ে প্রবল উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এই মিছিলে উপস্থিত রয়েছেন শুভেন্দু, সুকান্ত, দিলীপ ঘোষেরা। রাজ্য বিজেপির তরফে জানানো হয়, শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষদের বক্তব্য রাখার পরই পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগোনো হবে।
দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘এতদিন দিদি নাটক করে দেখাচ্ছিলেন যে পেট্রোল ডিজেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে খুব চিন্তিত। কিন্তু, এখন তাদের দেখা নেই। দিদির ভাইরাও কত আন্দোলন করছিল। এখন তারাও উধাও হয়ে গেছে। আমাদের সরকার তো ১৫ টাকা কমিয়ে দিয়েছে। মানুষ কষ্ট করেছে এতদিন। সেটা দেশের জন্য করেছেন। মোদিজি দেশের অর্থনীতির জন্য এতদিন পেট্রোল ডিজেলের দাম কমাননি। এবার কমিয়েছেন। আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের হাতে এখন টাকা আছে। তাই সবাই কেনাকাটা করেছে।
আগে চাইনিজ গুডস এনে দীপাবলি হত। মোদিজি তা বন্ধ করে দিয়েছেন। এটা প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেই সম্ভব। রিগিং করে কয়েকটা উপনির্বাচন জেতা যায়। কিন্তু, দেশের মানুষের মন জেতা যায় না। দিদির এক ভাই তো মোদিজিকে আবেদন করেছেন, যেন রেশন বিনামূল্যে দেওয়া হয়। কেন এখন কেন হাচ পাতছেন। আসলে এতদিন মোদীর টাকায় দিদি ফুটানি করছিলেন। তাই দিদিমণিকে বলব সারা দেশের দিকে তাকিয়ে দেখুন। বহু রাজ্যে VAT কমিয়েছে। আপনি কেন দাম কমাবেন না? তাই দিদির কাছে আবেদন আপনি VAT কমান। না হলে সাধারণ মানুষ না হলে এবার আন্দোলনে নামবে।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘মিছিল হবেই। আগে থেকেই কর্মসূচি ঠিক ছিল। তবে গোটা কলকাতার পুলিশ এখানে নামিয়ে আনা হয়েছে। এভাবে গেরুয়া শিবিরকে আটকানো যায়নি। আর আমরা কংগ্রেস বা বাম নই। আমরা বিজেপি। অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করব না। করার প্রশ্নই উঠছে না।
আমি রাজ্য সভাপতিকে অনুরোধ করব তিনি যেন রাজ্যজুড়ে এই আন্দোলনের ডাক দেন।’ তিনি আরও বলেন, এখানে আইন ভাঙতে আসিনি। কিন্তু দেখুন এদিকে ঘেরা। ওদিকেও ঘেরা। কলকাতা পুলিস শুধু নয়, রাজ্য পুলিসও নিয়ে চলে এসেছে। ২০০-৩০০ মিটার এলাকা ঘিরে ফেলা হয়েছে। শুনে রাখুন বিজেপিকে যত মারবেন বিজেপি তত বাড়বে। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী আপনি নিদ্রা ভাঙুন।
সাধারণ মানুষকে যে আশ্বাস দিয়েছিলেন তা রাখুন। কেন্দ্রের মতো শুল্ক কমিয়ে রাজ্যের মানুষের সমাস্যার সুরাহা করুন। শুভেন্দু অধিকারী বলেন, সরকার নন্দীগ্রামের ফলটা ভুলে গিয়েছে। দীপাবলির আগের নরেন্দ্র মোদী পেট্রোল ও ডিজেলের উপর থেকে শুল্ক কমিয়েছেন। আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোপণ্যের দাম কমা বাড়ার উপরে জ্বালানীর দাম নির্ভর করে।
এক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার তাদের শুল্ক কমাতে পারে। রাজ্য সরকার যে শুল্ক পায় তার পুরোটাই সে নেয়। আর কেন্দ্র যে শুল্ক পায় তার ৬০ শতাংশ রাজ্যকে ফিরিয়ে দেয়। ফলে ৪০ টাকারও বেশি রাজ্য সরকার পায়। যেভাবে কেন্দ্র জ্বালানীর উপর থেকে শুল্ক কমিয়েছে তাকে মেনে চলেছে দেশের ২২ রাজ্য। কিন্তু বাংলার তৃণমূল সরকার রাজ্যের শুল্ক কমায়নি। আমরা চাই উত্তর প্রদেশের যোগী রাজকে ফলো করুক বাংলা। শুল্ক কমানো হোক জ্বালানীর উপর থেকে।
দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘দিদি আপনি যে কথায় কথায় বলেন এগিয়ে বাংলা। পেট্রোল ডিজেলের ক্ষেত্রে আপনার স্লোগানের কী হল? আজ আমাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাহলে গতকাল যে একজন তৃণমূল নিজের জন্মদিন পালন করল মানুষের মধ্যে তখন তো করোনা ছড়াল না। আমার তো মনে হয় কালীঘাটে করোনা প্যাক করে রাখা আছে।
আর ও পড়ুন আজ শুরু হল শিলিগুড়ি থেকে ভারত-নেপাল বাস পরিষেবা
যেদিনই বিজেপি আন্দোলন করেন, সেদিন কালীঘাট থেকে করোনা ছেড়ে দেওয়া হয়। এখন তো বুদ্ধিজীবীরা কথা বলছেন না। তাঁদের দেখা নেই। কয়েকদিন আগে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ হয়। কয়েকজন মাত্র মুখ খুলেছিলেন। তাঁদের স্বাগত। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলব, আপনি আমাদের চাপে পেট্রোল ডিজেলের দাম কমাতে বাধ্য হবেন। আগামী কাল থেকে জেলায় জেলায় প্রতিটি ব্লকে ব্লকে পেট্রোল পাম্পে আমরা প্রচার চালাব।’
শমীক ভট্টাচার্য বলেন, রাজনৈতিক দলকে পুলিস আটকালে তারা যেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আমরা সেভাবেই করব। বিজেপি কোনও হরিনাম সংকীর্তনের দল নয়।