মালদা – মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকে মরা মহানন্দা নদীর ওপর বাঁশের সাঁকোই হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন এই সাঁকো পার হতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এরই মধ্যে ব্রিজ নির্মাণের দাবিতে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা এবং এবার তাঁরা সরাসরি ভোট বয়কটের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর মুকুন্দপুর ও উত্তর কাশিয়াপাড়ার মাঝখানে এই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোটির অবস্থান। বছরের পর বছর ধরে এই সাঁকো দিয়ে পারাপার করতে গিয়ে স্থানীয়দের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শিশু থেকে প্রবীণ, সকলকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই সাঁকো পার হতে হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ছোটখাটো দুর্ঘটনার পাশাপাশি গুরুতর দুর্ঘটনাও ঘটেছে একাধিকবার। বিশেষ করে বর্ষাকালে নদীর জল ফুলে উঠলে সাঁকো ভেঙে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। গ্রামবাসীদের মতে, এই বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যেও কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো স্থায়ী সমাধান এখনো আসেনি।
সবচেয়ে ভয়াবহ সমস্যা দেখা দেয় জরুরি পরিস্থিতিতে। সাঁকোর কারণে দমকল বা অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত গ্রামে ঢুকতে পারে না। অসুস্থ রোগীদের খাটিয়াতে করে সাঁকো পার করিয়ে অন্য প্রান্তে নিয়ে যেতে হয়। এতে প্রায়ই চিকিৎসা বিলম্বিত হয়, কখনো কখনো প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।
স্থানীয় বাসিন্দা ফুল কুমার সাহা জানিয়েছেন, প্রায় ২০০টি পরিবারের জন্য এই সাঁকো ছাড়া আর কোনো বিকল্প পথ নেই। তিনি অভিযোগ করেন, বহুবার জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েও কোনো ফল হয়নি। ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও ভোট শেষে আর তাঁদের দেখা মেলে না।
উত্তর মুকুন্দপুরের বাসিন্দা রেজাউল হকও একই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, বর্ষাকালে নদী ফুলে উঠলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়। প্রতি বছর সাঁকো ভেঙে গেলে গ্রামবাসীরাই নিজেদের টাকায় তা মেরামত করেন। সরকারি সহায়তা মেলে না বললেই চলে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, বহু বছর ধরে ব্রিজ তৈরির দাবি জানিয়ে আসলেও কেবল আশ্বাসবাণী ছাড়া হাতে কিছুই মেলেনি। এবার তাঁরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বিধানসভা নির্বাচনের আগে ব্রিজের কাজ শুরু না হলে তারা ভোট দেবেন না।
জরুরি পরিস্থিতিতে যে সমস্যাগুলি তৈরি হয়, তার কথা উল্লেখ করে গ্রামবাসীরা বলেন, গর্ভবতী মহিলা বা গুরুতর অসুস্থ রোগীদের সময়মতো হাসপাতালে নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। সাঁকো দিয়ে খাটিয়ায় রোগী বহন করা যে কতটা বিপজ্জনক, তা প্রতিদিনই তাঁরা উপলব্ধি করছেন।
এ বিষয়ে জেলা পরিষদের কৃষি সেচ ও সমবায় কর্মাধ্যক্ষ রবিউল ইসলাম জানান, ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে এবং টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, টেন্ডার পাস হলেই দ্রুত ব্রিজ তৈরির কাজ শুরু হবে।
তবে এই আশ্বাসবাণীতে আস্থা রাখতে পারছেন না এলাকার মানুষ। তাঁদের দাবি, বহুবার এর আগেও একই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কাজ শুরু না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা কোনো প্রতিশ্রুতিতে ভরসা রাখতে চান না।
স্থানীয়দের বক্তব্য, সাঁকো পারাপারের ঝুঁকি নিয়ে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিভাবকরা প্রতিদিনই ভয় নিয়ে সন্তানদের স্কুলে পাঠান। প্রায়ই বৃষ্টি হলে সাঁকো পিচ্ছিল হয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
চাষিরাও সমস্যায় পড়েছেন। ফসল বাজারে নিয়ে যেতে সাঁকো পার হওয়ার সময় বহুবার সবজি ও শস্য নদীতে পড়ে নষ্ট হয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি জীবনের ঝুঁকিও তাঁদের বইতে হচ্ছে প্রতিদিন।
স্থানীয় পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকেও একাধিকবার ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানানো হলেও এখনো পর্যন্ত কোনো ফল পাওয়া যায়নি। পঞ্চায়েত সদস্যরা জানিয়েছেন, উপযুক্ত তহবিল এবং প্রশাসনিক অনুমোদন ছাড়া তাঁদের কিছুই করার নেই।
এলাকার মানুষ মনে করছেন, স্থায়ী ব্রিজ না হলে এই দুর্ভোগ কখনোই শেষ হবে না। তাঁদের বক্তব্য, ভোটের আগে সব রাজনৈতিক দল প্রতিশ্রুতি দিলেও কাজের ক্ষেত্রে কেউ এগিয়ে আসে না।
স্থানীয়রা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ব্রিজ তৈরির কাজ শুরু না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা তাঁদের অবস্থান থেকে সরবেন না। ভোট বয়কটের সিদ্ধান্তে তাঁরা ঐক্যবদ্ধ, এবং প্রয়োজনে আন্দোলনে নামারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
