মালবাজারে গলাকাটা দেহ উদ্ধার, স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রী খুনের অভিযোগ

মালবাজারে গলাকাটা দেহ উদ্ধার, স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রী খুনের অভিযোগ

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram



জলপাইগুড়ি – জলপাইগুড়ির মালবাজারের শিশাবাগান এলাকায় নৃশংস খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। দুপুরে হন্তদন্ত হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান এক ব্যক্তি, বিষয়টিকে তখন তেমন গুরুত্ব দেননি স্থানীয়রা। কিন্তু সন্ধ্যা নামতেই সেই ব্যক্তির স্ত্রীর গলাকাটা দেহ উদ্ধার হয় বাড়ি থেকে। স্বামী রামপ্রসাদ বাউলির বিরুদ্ধে স্ত্রী বিমলা বাউলিকে খুনের অভিযোগ উঠেছে।

মালবাজার মহকুমার চ্যাংমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের আপালচাঁদ শিশাবাগান এলাকায় বিমলা বাউলির (৪৫) বাড়ি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিমলা ও তাঁর স্বামী রামপ্রসাদ বাউলি বাড়িতেই থাকতেন। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে এবং একমাত্র ছেলে কাজের জন্য ভিনরাজ্যে থাকেন।

রামপ্রসাদ পেশায় টোটো চালক। স্থানীয়দের মতে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্প্রতি কোনো মনোমালিন্য হয়েছিল কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, দিনের বেলাতেই বিমলাকে খুন করা হয়েছে। কারণ, দুপুর নাগাদ প্রতিবেশীরা রামপ্রসাদকে হন্তদন্ত অবস্থায় বাড়ি থেকে বেরোতে দেখেছেন।

সন্ধ্যা নামার পরও রামপ্রসাদের বাড়িতে আলো না জ্বলতে দেখে সন্দেহ হয় তাঁর বাবা মুকুল বাউলির। তিনি ঘরের ভেতরে আলো জ্বালাতে গেলে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন পুত্রবধূ বিমলার দেহ। সঙ্গে সঙ্গে তিনি চিৎকার করে প্রতিবেশীদের ডাকেন।

খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় মালবাজার থানার পুলিশ। পুলিশ বিমলার দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। পাশাপাশি, অভিযুক্ত রামপ্রসাদ বাউলির খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে।

মাল থানার আইসি সৌম্যজিৎ মল্লিক জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন করা হয়েছে বিমলাকে। ঘটনাস্থল থেকে রক্তাক্ত কাপড় ও কিছু প্রমাণ সংগ্রহ করেছে পুলিশ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বিমলা শান্ত ও ভদ্র স্বভাবের মহিলা ছিলেন। তাঁদের দাবি, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তেমন কোনো বড় ধরনের ঝামেলার খবর তাঁরা শোনেননি। তবে পারিবারিক কোনো কারণে এই খুন হতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে।

প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, দুপুরের পর থেকে বাড়ির দরজা বন্ধ ছিল। কেউ বাইরে থেকে কোনো শব্দও পাননি। তাই সন্ধ্যা পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে তাঁদের মধ্যে তেমন কোনো সন্দেহ হয়নি।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রামপ্রসাদ বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এলাকার থানাগুলোকেও অভিযুক্তের হদিস রাখতে সতর্ক করা হয়েছে।

এদিকে ঘটনার পর থেকেই এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। স্থানীয়রা দোষীর দ্রুত গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন। তাঁদের মতে, এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

পুলিশ জানিয়েছে, বিমলার মোবাইল ফোন, কল রেকর্ড এবং পারিবারিক যোগাযোগের ওপর নজর রাখা হচ্ছে। তদন্তে প্রয়োজনে প্রতিবেশী ও আত্মীয়দেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

এছাড়া, হত্যার কারণ নির্ধারণে পুলিশের ক্রাইম টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। হত্যার সময় ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্রটি এখনো উদ্ধার করা যায়নি।

ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ স্পষ্ট হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের অনুমান অনুযায়ী, ঘটনাটি দুপুরের মধ্যেই ঘটেছে এবং এর পরপরই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় রামপ্রসাদ।

মালবাজার থানার পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের জন্য একাধিক টিম গঠন করা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে খোঁজ চালানো হচ্ছে।

এই নৃশংস ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে আপালচাঁদ শিশাবাগান এলাকায়। স্থানীয়রা বলছেন, যতদিন না রামপ্রসাদকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, ততদিন তাঁরা স্বস্তিতে থাকতে পারছেন না। পুলিশের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, খুব শীঘ্রই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হবে।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top